বিএনপি যেদিন কর্মসূচি দেয়, সেদিন আপনাদের গা এত চুলকায় কেন: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

এক দফা দাবিতে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি বুধবার বিকেলে পদযাত্রার আয়োজন করে। কেডি ঘোষ সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আপনাদের অধিকার আছে আপনারা মিটিং করেন। আমরা আজ করছি, আপনারা কাল করেন। ১০টা করেন; ১০০টা করেন। আপনাদের যত কথা আছে বলেন; কিন্তু বিএনপি যেদিন কর্মসূচি দেয়, সেদিন আপনাদের গা এত চুলকায় কেন? শান্তির নামে অশান্তি সৃষ্টি করা অথবা আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন কেন?’

আজ বুধবার বিকেলে কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত এক দফা দাবিতে খুলনায় পদযাত্রা কর্মসূচির আগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগরের কে ডি ঘোষ রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সামনে এ সমাবেশ হয়।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যদি মনে করেন বিএনপি আন্দোলন জানে না, তাহলে জেনে নিয়েন, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে কী আন্দোলন হয়েছিল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে কোথাও লুকিয়ে ছিলেন না। নিজেই যুদ্ধ করেছিলেন। সেই জিয়ার সৈনিকেরা কিন্তু সবকিছু নিয়ে প্রস্তুত। তাঁরা ভদ্র তবে দুর্বল নয়। তাঁরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছেন। যদি প্রশাসনকে যত্রতত্র দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করতে চান, তাহলে কিন্তু জনগণের হাত থেকে রেহাই মিলবে না।’

সমাবেশে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আজকের এই লড়াইটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লড়াই। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য, হারিয়ে যাওয়া অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই। এটা বিএনপির একার কোনো লড়াই না। এটা ব্যক্তিগত কোনো লড়াই না। এটা ক্ষমতায় যাওয়ার লড়াইও না। ক্ষমতায় বসে যারা লুটপাট করছে, খুন করছে, গুম করছে, নারী নির্যাতন করছে, লুটপাটের মাধ্যমে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে—তাঁদের বিতাড়িত করতে এ লড়াই। এই লড়াইয়ের পর নতুন নিরপেক্ষ সরকার আসবে। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।

পদযাত্রা কর্মসূচির আগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ক্ষমতায় এলে কথায় কথায় আমরা কারও বিরুদ্ধে মামলা দেব না। আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। আন্দোলন করছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আপনারা (পুলিশ) কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেননি। আপনারা প্রজাতন্ত্রের চাকরিজীবী। আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করে কিছুদিন চাকরি করতে পারবেন। কিন্তু পাপের বোঝা ভারী হয়ে গেলে আর কিন্তু এদিক-সেদিক যাওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। জনগণের ঘাড়ে লাঠিপেটা করে কথায় কথায় মামলা দিয়ে চাকরি টিকিয়ে রাখতে চাওয়াটা ভালো না। আপনারা যোগ্যতা অনুয়ায়ী চাকরি করবেন। জনগণের নিরাপত্তা প্রদান করবেন এটাই আমাদের কাম্য।’

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী। আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এস এম মনিরুল হাসান প্রমুখ।

পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেলা সাড়ে তিনটার দিক থেকে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল সহকারে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। ছয়টার দিকে সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। এতে খুলনা নগর ও জেলার বিএনপির নেতা-কর্মী, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। কর্মসূচি ঘিরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়সংলগ্ন সদর থানা মোড় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পদযাত্রাটি দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে নগরের জেলা পরিষদ ভবন সংলগ্ন কেসিসি মার্কেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।