ঈদের আগে শেষ বারে জমজমাট শতবছরের শাহপুর পশুর হাট

গতকাল বৃহস্পতিবার শাহাপুরের সাপ্তাহিক হাট রূপান্তরিত হয় কোরবানির পশুর হাটে। বিকিকিনিও হয়েছে অন্যদিনের তুলনায় বেশি। হাটের একাংশের চিত্রছবি: প্রথম আলো

খুলনার পশুর সবচেয়ে বড় হাট হিসেবে পরিচিত ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর হাটটি। প্রতি বৃহস্পতিবার সেখানে হাট বসে। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল কোরবানি ঈদের আগের শেষ হাট। এ কারণে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে হাটটিতে। ইজারা না দিয়ে এবার হাটটি পরিচালনা করছে উপজেলা প্রশাসন। এবারও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন হাটটিতে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা।

মূলত সাধারণ দিনে সেখানে হাট শুরু হয় বিকেল থেকে। তবে গতকাল সকাল থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আর কেনাবেচা জমে ওঠে বিকেল থেকেই। খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু ও ছাগল নিয়ে আসা হয় ওই হাটে। আর ক্রেতা হিসেবে হাটে পশু কিনতে আসেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার মানুষ। হাজার হাজার পশু মধ্য থেকে নিজের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী পশু কিনতে পারেন ক্রেতারা। মূলত স্থানীয়ভাবে বাড়িতে লালন-পালন করা হয় এমন গরু বেশি বিক্রি হয় ওই হাটে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, হাটটির বয়স ১০০ বছরের বেশি। প্রতি হাটেই হাজার হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হয়। আর কোরবানি ঈদের আগের হাটে কেনাবেচা হয় সবচেয়ে বেশি। কোরবানির পশু কেনাবেচায় মানুষের আস্থার হাটে পরিণত হয়েছে এটি।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকা নিয়ে বসেছে হাট। হাজার হাজার গরু ও ছাগল নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রেতারা। হাটের পূর্ব পাশে আলাদা জায়গায় ছাগল বিক্রি হচ্ছে। এ সময়টায় ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পশু ও ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৭০ হাজার থেকে শুরু করে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের গরু আনা হয়েছে হাটে। আর ছাগলের দাম ৭ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

হাটে বিপুলসংখ্যক পশুর উপস্থিতি দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার চাহিদার বিপরীতে জেলায় পশুর উৎপাদন বেশি
ছবি: প্রথম আলো

হাটে আসা ক্রেতা–বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই থেকে আড়াই মণ মাংস হতে পারে, এমন মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ওই আকারের গরুর দামও তুলনামূলক বেশি। এবার বড় গরুর চাহিদা বেশ কম। দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষ কম দামের গরু কিনে কোরবানি দিতে চাইছেন বলে জানান তাঁরা।

খুলনা নগরের রায়েরমহল এলাকা থেকে সেখানে গরু কিনতে যান শেখ খায়রুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন। ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা দিয়ে পাঁচ মণের বেশি মাংস হবে এমন একটি কালো গরু কেনেন তাঁরা। হাসিল মিটিয়ে দেওয়ার পর কথা হয় খায়রুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি চাইছেন বিক্রেতারা। তবে দরদাম করে কিনতে পারলে পছন্দের মধ্যে সেরা গরুটি কেনা যাচ্ছে।

হাটটিতে গতকাল হাজার হাজার গরু-ছাগল উঠলেও সবার দৃষ্টি ছিল ‘কালা পাহাড়’ নামের একটি গরুর দিকে। ১ হাজার ২০০ কেজি ওজনের কালা পাহাড় দেখতে যেন ছোটখাটো একটি হাতি। বিশাল গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে সাড়ে সাত লাখ টাকা। পাশেই ছিল একই মালিকের আরেকটি বড় গরু। ৭০০ কেজি ওজনের ওই গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে আড়াই লাখ টাকা।

গরু দুটি দেখাশোনা করছিলেন আরিফ হাসান নামের এক যুবক। তিনি দাবি করেন, কালা পাহাড়ের মতো এত বড় গরু খুলনায় আর নেই। প্রতিবছর এমন আকারের দু-একটি গরু ঈদের বাজারে তোলার জন্য প্রস্তুত করেন তাঁরা। বিক্রিও হয়ে যায়, এগুলো পড়ে থাকে না।  

রোদ থেকে বাঁচতে কাঁঠালপাতা মাথায় দিয়েছেন এক ব্যাপারী
ছবি: প্রথম আলো

ঈদের দিন জবাই করে মাংস বিক্রির জন্য চারটি গরু কিনেছেন খুলনা নগরের বৈকালী এলাকার মো. কুরবান। মূলত তিনি একজন কসাই। কুরবান বলেন, ‘আমরা সাধারণত এই হাট থেকেই গরু কিনি। কিন্তু এবার দেখছি গরুর দাম ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি। এরপরও বেশ ভালো ভালো গরু উঠেছে হাটে।’

গরুর দাম নিয়ে ক্রেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে একটি গরু দেখিয়ে দেলোয়ার মীর নামের স্থানীয় এক বিক্রেতা জানান, ‘এটি নিজের বাড়ির গরু। গোখাদ্যের দাম এখন অনেক বেশি। একটা গরু বড় করতে বেশ খরচ পড়ে যাচ্ছে। এ কারণে গরুর দামও বেশি।’  

এবারের কোরবানি ঈদে চাহিদার তুলনায় গরুর জোগান বেশি থাকায় মানুষ তুলনামূলক কম দামে পশু কিনতে পারছেন বলে মন্তব্য করেন ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল কবীর। তিনি বলেন, উৎপাদন খরচ হিসেবে পশুর দাম বেশ কম। এবার খুলনা ও আশপাশের জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর উৎপাদন অনেক বেশি।  

হাটের কোলাহল উপেক্ষা করে পছন্দের পাতা খাচ্ছে ছাগলটি। ২২ হাজার টাকা দাম চাওয়া হয়েছে ছাগলটির
ছবি: প্রথম আলো

হাটে আনা কোনো পশু অসুস্থ হলে এগুলো চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে জেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। এ ছাড়া জাল নোট শনাক্তকরণে কাজ করছে সাতটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা। প্রতারক ও জাল নোটের বিষয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করতে মাইকে প্রতিনিয়ত প্রচার করা হচ্ছে বিভিন্ন তথ্য। হাসিল আদায় সহজ করতে হাটের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হয়েছে পাঁচটি বুথ। একেকটি বুথে কাজ করছেন তিন থেকে পাঁচজন ব্যক্তি।

একটি বুথের হাসিল আদায়কারী শুভজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘সকাল থেকেই কেনাবেচা শুরু হয়েছে। তবে মূল কেনাবেচা হয় বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত। কয়েক হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হবে এক দিনে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু কিনতে সেখানে আসছেন ক্রেতারা।’

আরও পড়ুন