লেবুর ‘ভূমি’ শ্রীমঙ্গলে দাম কেন বেশি, কী বলছেন কৃষক–বিক্রেতারা

লেবু

বাংলাদেশে যে কয়টি এলাকা লেবু উৎপাদনের জন্য পরিচিত, তার একটি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। এখানে গত এক সপ্তাহে লেবুপ্রতি দাম বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা করে। লেবুচাষি, বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বছর মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৭২৪ হেক্টরে লেবুর চাষ হয়েছে। সোমবার সকালে জেলার অন্যতম পাইকারি হাট শ্রীমঙ্গল নতুন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অনেকে লেবু বিক্রি করে খালি ঠেলাগাড়ি নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। জিপ, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় লেবু নিয়ে বাজারে ঢুকছেন অনেকে। অনেকেই রাস্তার পাশে ঠেলায় লেবু নিয়ে দাঁড়িয়ে। প্রতিটি গাড়ির লেবুর দর হাঁকা হচ্ছে। সর্বোচ্চ দরদাতা লেবুবোঝাই গাড়ি গন্তব্যে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কোথাও বস্তার মধ্যে লেবু ভরা হচ্ছে। একটি ঠেলা গাড়িতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৮০০ লেবু থাকে।

শ্রীমঙ্গলের বিষামনির মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, এক ঠেলা লেবু (৮০০) বিক্রি করেছেন ৮ হাজার ৬০০ টাকায়। একটি লেবুর দাম পড়েছে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। সপ্তাহখানেক আগে সমপরিমাণ লেবু বিক্রি করেছেন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায়।

বিল্লাল মিয়াসহ অন্যদের কাছ থেকে পাঁচ ঠেলা লেবু কিনেছেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের মো. জিয়া। তিনি বলেন, ‘গাড়িভাড়াসহ একটা লেবুর দাম পড়বে ১৩ টাকার মতো। এখন মালের (লেবুর) উৎপাদন কম, মাল কম। দাম বেশি, পাইকার বেশি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন লেবুর মৌসুম না। যে লেবু পাওয়া যায়, রস কম। চাহিদার চেয়ে জোগান কম, এ জন্য দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলেই এক মাসের মধ্যে লেবু পরিপক্ব হবে। জোগান বেড়ে যাবে, দামও কমবে।’

একই রকম কথা বললেন লেবুচাষি শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়ার জনক দেববর্মা। তিনি বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লেবুর উৎপাদন একেবারে কম। কিন্তু চাহিদা বেশি। কমবেশি সব বাগানেরই একই অবস্থা। গত দুই বছর লেবুর ভালো দাম মিলেনি। এ জন্য বাগানের যত্ন কম করা হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে তিনি বড় আকারের ৮০০ লেবু ১২ টাকা করে বিক্রি করেছেন। এখন তাঁর বাগানে বিক্রিযোগ্য লেবু নেই। আর দুই সপ্তাহ পরে রসাল লেবু মিলবে। তাঁর ১২ কিয়ারের (এক কিয়ার সমান ৪০ শতাংশ) লেবুবাগান আছে।

কুমিল্লার ক্রেতা হাতেম মিয়া বলেন, তিনি এক ঠেলা (৮০০) লেবু কিনেছেন ৭ হাজার ৫০০ টাকায়, এক ঠেলা ৭ হাজার ২০০ টাকায়, এক ঠেলা ৪ হাজার ৭০০ টাকায়, এক ঠেলা ৫ হাজার ৮০০ টাকায় এবং ১০০ লেবু ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। ৩ হাজার ৩০০ লেবু কিনেছেন ২৬ হাজার ৫৫০ টাকায়। তাঁর ছোট-বড় প্রতিটি লেবুর গড় দাম পড়েছে প্রায় সাড়ে ৮ টাকা। গাড়িভাড়া, শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ আছে তিন হাজার টাকা। কুমিল্লা পর্যন্ত এই লেবু পৌঁছাতে লেবুপ্রতি দাম পড়বে ১০ টাকার মতো। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে হলে এই লেবু ৫ টাকা করে পড়ত।’

কৃষি বিভাগ, লেবুচাষি, ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবুর মৌসুম হচ্ছে বর্ষাকাল। এ সময় প্রচুর লেবু উৎপাদিত হয়। তখন দামও কম থাকে। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় লেবু পচে নষ্ট হয়। শুকনা মৌসুমে লেবুর উৎপাদন প্রাকৃতিক কারণেই কমে যায়। যাঁরা গাছের বাড়তি যত্ন করেন, তাঁদের বাগানে সব মৌসুমে লেবু থাকে। তবে সেটা চাহিদার তুলনায় বেশ কম। এমন পরিস্থিতিতে রোজায় লেবুর চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে। রোজার মাঝামাঝি পর্যন্ত লেবুর চাহিদা থাকে। এরপর চাহিদা কমতে থাকে, দামও কমে যায়। ঈদের আগে আবার দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

শ্রীমঙ্গলের এক ক্রেতা মামুন আহমদ বলেন, খুচরা বাজার থেকে মাঝারি আকারের এক হালি (চারটা) লেবু কিনেছেন ৬০ টাকায়। দুই মাস আগে একই পরিমাণ লেবু কিনেছেন ১০ থেকে ১২ টাকায়।

মৌলভীবাজার শহরের আড়ত থেকে ৮ থেকে ১৫ টাকা দরে লেবু কিনে খুচরা ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানালেন টিসি মার্কেটের খুচরা বিক্রেতা মো. লায়েছ মিয়া।