সিলিন্ডারে ঝুঁকি নিয়ে গ্যাস সরবরাহ

গাজীপুরের সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে অবৈধভাবে বাসাবাড়ি ও কলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

কাভার্ড ভ্যানভর্তি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হচ্ছে। গতকাল বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার কাজলী সিএনজি ফিলিং স্টেশনে
প্রথম আলো

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ফিলিং স্টেশন থেকে শুধু যানবাহনে গ্যাস সরবরাহের কথা। কিন্তু ওই স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে অবৈধভাবে গ্যাস নিয়ে গাজীপুরের অনেক বাসা ও শিল্পকারখানায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে যথাযথ উদ্যোগ না নিয়ে এসব সিলিন্ডার রিকশা, ভ্যান বা কাভার্ড ভ্যানে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এতে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সিএনজি স্টেশনগুলোতে এভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে গ্যাস সরবরাহ করলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের বড়বাড়ি এলাকায় একটি সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারে করে গ্যাস নেওয়ার সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হন অন্তত পাঁচজন। আহতদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগরা এলাকায় একটি পোশাক তৈরি কারখানার ভবনের বাইরে গ্যাসের সিলিন্ডারবাহী একটি কাভার্ড ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। ওই কাভার্ড ভ্যান থেকে পাইপের মাধ্যমে কারখানার ভেতরে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, কারখানার গ্যাসলাইনে চাপ নেই। তাই বিকল্পভাবে স্টেশন থেকে গ্যাস এনে চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে গাজীপুর তিতাস গ্যাস কোম্পানির প্রকৌশলী শাহ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, সিএনজি স্টেশন থেকে সিএনজিচালিত যানবাহন ছাড়া অন্য কোনোভাবে গ্যাস সরবরাহ করা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। একইভাবে খোলা সিলিন্ডারে গ্যাস বহন করে বাসাবাড়ি বা কারখানায় ব্যবহার করাও অপরাধ। কিন্তু জনবলসংকটের কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোকে সব সময় নজরদারিতে রাখা সম্ভব হয় না বলে জানান তিতাসের এই কর্মকর্তা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও টঙ্গী এলাকার সিএনজি স্টেশনের প্রায় সব কটি থেকেই দিনে–রাতে সিলিন্ডারে করে নেওয়া হচ্ছে গ্যাস। সিএনজি স্টেশনগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মীরা জানান, কাভার্ড ভ্যানে করে আনা সিলিন্ডারগুলোতে রাতভর গ্যাস ভরার কাজ চলে। গাড়ির জন্য বরাদ্দ সিএনজি এখন শিল্পকারখানা, বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব বাণিজ্যিক কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্যাসের চাপ কম থাকার অজুহাতে যেসব ফিলিং স্টেশন সিএনজি না দিয়ে সিএনজিচালিত গাড়িগুলোকে ফিরিয়ে দেয় সন্ধ্যার পর, সেসব স্টেশনও সরগরম হয়ে ওঠে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।

গাজীপুরে তিতাসের দুটি কার্যালয়ের অধীন তালিকাভুক্ত ৮০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এসবের মধ্যে দু-একটি স্টেশন বাদ দিয়ে বেশির ভাগ স্টেশন থেকে ভ্যানে বা কাভার্ড ভ্যানে স্থাপিত সিলিন্ডারে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। বাজারে বিভিন্ন আকারের গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে পাওয়া যায়। সাধারণত ৬০, ৯০ ও ১৩০ লিটার ধারণক্ষমতার সিলিন্ডার ভ্যানে স্থাপন করা হয়। এসব সিলিন্ডার যায় বাসাবাড়ি ও খাবার হোটেলগুলোতে। আর শিল্পকারখানার মালিকেরা বড় বড় কাভ্যার্ড ভ্যানে ৫০ থেকে ১০০টি গ্যাসের সিলিন্ডার স্থাপন করা হয়। সেগুলো দিয়ে কারখানার জেনারেটর চালানো হয়। সিএনজি স্টেশনের মালিকেরাও তাঁদের গ্যাস দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

যানবাহন ছাড়া অন্য কোথাও সিএনজি বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও সিএনজি স্টেশনের মালিকেরা এ নিয়ম মানছেন না। এ বিষয়ে মালিকদের কেউই কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকার মির্জাপুর সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আমরা চাকরি করি। তাই আমাদের মালিক যেমন নির্দেশ, সেভাবেই পাম্প চালাই। সারা দিন ১০০ গাড়িতে গ্যাস না দিয়ে একটি কারখানার সিলিন্ডারবাহী গাড়িতে গ্যাস দিলে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাই এসব সিলিন্ডারবাহী গাড়ি কেউ ফিরিয়ে দিতে চায় না।’