একসঙ্গে মৃত্যুর ইচ্ছাপূরণ হলো এই দম্পতির

পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে আজগার আলী ও তহিদা খাতুন দম্পতিকে। আজ শুক্রবার দুপুরে রংপুরের বদরগঞ্জের তালুকদামোদরপুর ইন্দিরাপাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

প্রায় পাঁচ যুগের সংসার তাঁদের। দুজনের মধ্যে ছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব। উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য যে হয়নি তা নয়, কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকেনি। দীর্ঘ সংসারজীবনে ঘাত-প্রতিঘাত তাঁরা সামলেছেন একসঙ্গে। কখনো পরস্পরকে ছেড়ে থাকতেন না তাঁরা। বেঁচে থাকতে সব সময় কামনা করতেন একই সঙ্গে মৃত্যুর। তাঁদের সেই ইচ্ছাই যেন পূরণ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই বয়স্ক দম্পতি একই দিনে পৃথিবী ছেড়ে চির বিদায় নিয়েছেন।

ঘটনাটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের তালুকদামোদরপুর ইন্দিরাপাড়া গ্রামের। এ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন আজগার আলী (৮০) ও তহিদা খাতুন (৭২) দম্পতি। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে আজগার আলী এবং একই দিনে রাত আটটার দিকে তাঁর স্ত্রী তহিদা খাতুন ইন্তেকাল করেন।

আজগার আলীর ভাতিজা নুরু মিয়া জানান, রোজা শেষে গত বুধবার দিবাগত রাতের খাবার একসঙ্গে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ওই দম্পতি। গতকাল সকাল আটটার দিকে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন তহিদা খাতুন। এ সময় ডাকাডাকি করেও স্বামীর সাড়া পাননি। তাঁর কান্না শুনে বাড়ির অন্য লোকজন ছুটে আসেন। তখন তাঁরা বুঝতে পারেন আজগর আলী মারা গেছেন।

স্বজনেরা জানিয়েছেন, আজগার আলী ছিলেন কৃষক। তিনি কিছুদিন ধরে অ্যাজমা রোগে ভুগলেও গৃহিণী তহিদা খাতুনের তেমন কোনো রোগ ছিল না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শামসুল হক জানান, আজগার আলীর মৃত্যুর পর থেকে স্ত্রী তহিদা খাতুন শোকার্ত ছিলেন। গতকাল বাদ জোহর জানাজা শেষে বাড়ির পাশেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আজগার আলীকে। জানাজা ও দাফনকার্যে অংশগ্রহণকারী স্বজনদের অনেকটা শক্ত মনে বিদায় দেন তহিদা খাতুন। রাত আটটার দিকে বাড়িতে হঠাৎ মাথা ঘুরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তাৎক্ষণিক মারা যান তহিদাও। পরে মধ্যরাতে জানাজা শেষে স্বামীর কবরের পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়।

ওই দম্পতির সন্তান লাভলু মিয়া বলেন, ‘আমার বাবা-মায়ের মধ্যে যে ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব ছিল, তা এ যুগের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দেখতে পাই না। জীবদ্দশায় বাবা-মা সব সময় কামনা করতেন একসঙ্গে মৃত্যুবরণের। আল্লাহ তাঁদের সেই মনোবাসনা পূর্ণ করেছেন।’
প্রতিবেশী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘জীবদ্দশায় বুড়া–বুড়ি (ওই দম্পতি) সীমাহীন ভালোবাসায় পরস্পরকে জড়িয়ে ছিলেন একসঙ্গে, মারাও গেলেন অনেকটা একই সঙ্গে। এসব দেখে আমরা অবাক হয়েছি।’