চুয়াডাঙ্গায় আবারও শৈত্যপ্রবাহ, হাসপাতালে রোগীদের ভিড়

চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র

টানা পাঁচ দিন পর আবারও শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্ত জেলা চুয়াডাঙ্গা। আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান প্রথম আলোকে জানান, মঙ্গল ও বুধবার ঘন কুয়াশার কারণে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার মেঘ কেটে গেলে তাপমাত্রাও কমে যায় এবং উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার থেকেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকে। যে কারণে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

হাসপাতালে রোগী বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে

জেলা হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের চেম্বারে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতালে সরেজমিন অবস্থান করে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে শিশু, ডায়রিয়া এবং মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অসুস্থ পাঁচ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশুকে কোলে নিয়ে কাঁদছিলেন মা আনেহার খাতুন। তিনি দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ধান্যঘরা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, টানা ৯ দিন দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার বাড়িতে ফেরেন। এক দিন না যেতেই আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ছেলের অবস্থা ক্রমে অবনতি হওয়ায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স তানিয়া নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, একটি কেবিনসহ ১৫ শয্যার এই ওয়ার্ডে ৪২ জন শিশু চিকিৎসাধীন। আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আরও ৮ জন ভর্তি হয়েছে। সব মিলে ধারণক্ষমতার প্রায় চার গুণ রোগীর সেখানে চিকিৎসা চলছে।

আরও পড়ুন

শিশু ওয়ার্ডের মতোই মেডিসিন ওয়ার্ডে (পুরুষ ও মহিলা) ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েক দিন ধরেই। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহিলা (মেডিসিন) ওয়ার্ডে ১২ শয্যার বিপরীতে ৪০ এবং পুরুষ (মেডিসিন) ওয়ার্ডে ১৩ শয্যার বিপরীতে ৪২ জনকে ভর্তিরত অবস্থায় পাওয়া যায়।

১০০ শয্যার এই হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা কোনো শয্যা না থাকলেও এদিন ৫৬ জন ডায়রিয়া রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। যার মধ্যে ৪৬ জনই শিশু। এ ছাড়া ৪ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এ এস এম ফাতেহ আকরাম প্রথম আলোকে বলেন, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন তিন শতাধিক রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া ৬০০ থেকে ১ হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নিউমোনিয়া, রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত। সীমিত জনবল দিয়ে ধারণক্ষমতার তিন থেকে চার গুণ রোগী সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা। এরপরও আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছেন তাঁরা।

কৃষি বিভাগের সতর্কতা

গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশার কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো ধানের বীজতলা ও আলুখেত রক্ষায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৩৬ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ জন্য ১ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে সেখানে ১ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে।

উপপরিচালক সুভাস চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ধানের বীজতলা রক্ষায় সকালে চারার ওপর থেকে শিশির সরিয়ে দেওয়া, সম্ভব হলে চারা রাতের বেলা ঢেকে দেওয়া, বীজতলায় সেচ দিয়ে পরদিন সকালে পানি বের করে দিতে হবে। বীজতলা লাল হলে জিপসাম ও ইউরিয়া সার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আলুখেতে আগামধসা ও নাবিধসা ছত্রাক যাতে না লাগে, সে জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে বলা হয়েছে। এ জন্য মাঠপর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।