ভাঙাচোরা সড়ক, আছে জলজট 

  • বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই।

  • ড্রেন পরিষ্কার করা হয় না, আবার ড্রেনের ময়লা তুলে রাস্তার ওপর দীর্ঘদিন ফেলা রাখা হয়।

খুলনা সিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা গেটের সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে আছে। গত বৃহস্পতিবার কাশিপুর এলাকায়
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

খুলনা নগরের নতুন রাস্তা মোড় থেকে বিআইডিসি রোডে ঢোকার মুখে কাদায় একাকার। কাদাপানি মাড়িয়ে সামনে এগোলে পদ্মা মোড়। মোড় থেকে পদ্মা রোড নামের রাস্তাটি ভৈরব নদের দিকে পদ্মা অয়েল ডিপোতে গেছে। প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সড়কটি এখন একেবারে চলাচলের অনুপযোগী। খানাখন্দে ভরা সড়কের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান ফটকের কিছুটা সামনে ‘রাস্তা বন্ধ, আদেশক্রমে কেসিসি’—এ রকম একটা সাইনবোর্ড দেওয়া। 

ওই সড়কের বাসিন্দা জাকিয়া বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কের ড্রেনের কাজ হয়েছে। এখন কালভার্টের কাজ হবে, এরপর রাস্তা হবে। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪২ টন ওজনের ৭০-৮০টি তেলবাহী ট্যাংকার এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। চালকেরা খুবই ঝুঁকির নিয়ে চলাচল করেন। আর পথচারীদের ভোগান্তির তো শেষ নেই। 

খুলনা বিভাগের বড় তিনটি সরকারি তেলের ডিপো ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে ফায়ার সার্ভিসের কোনো স্টেশন নেই।

উত্তর কাশিপুর এলাকার পদ্মা রোডটি নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই ওয়ার্ডের পদ্মা রোড, মেঘনা রোড, যমুনা রোডসহ বেশির ভাগ সড়কের এখন বেহাল। অবশ্য সড়কগুলোতে উন্নয়নকাজ চলমান। তবে তা ভীষণ ধীরগতিতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওয়ার্ডের ড্রেনেজ–ব্যবস্থাও বেশ নাজুক। মশার দাপটও অনেক বেশি। বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে ওয়ার্ডের বেশ কিছু উন্নয়নকাজ হচ্ছে। আর করপোরেশন এলাকার মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে সামান্য টাকার বিনিময়ে ওয়ার্ড অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করায় মানুষ খুশি। 

৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সীমানায় ভৈরব নদ, দক্ষিণে বিআইডিসি রোড, পূর্বে গোয়ালপাড়া পাওয়ার হাউসের পশ্চিম সীমানা এবং পশ্চিম দিকে পুরোনো যশোর রোড, যমুনা অয়েল ডিপো ও দৌলতপুর এবং খালিশপুর থানার সীমানা। ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার, ভোটার সাড়ে আট হাজারের মতো। 

ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সুলতান মাহামুদ টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। গতবার বিএনপির সমর্থনে জয়ী হওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এবারও তিনি নির্বাচন করছেন। সুলতান মাহামুদ বলেন, ‘মানুষের পাশে থাকি বলেই তিন–তিনবার মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। বিভিন্ন রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জায়গার অভাবে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন করতে পারিনি। ঘরে ঘরে বর্জ্য নেওয়ার প্রকল্পটা কার্যকর করা যায়নি, তবে শুরু হবে।’ 

এর বাইরে খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক শেখ খালিদ আহমেদ এবার এই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই। রাস্তাঘাটগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ ভাঙা। পানি জমে থাকে। ড্রেনেজ–ব্যবস্থাও ভালো না। ড্রেন পরিষ্কার করা হয় না, আবার ড্রেনের ময়লা তুলে রাস্তার ওপর দীর্ঘদিন ফেলা রাখা হয়। কাউন্সিলরের সঙ্গে যাঁদের সখ্য, তাঁদের বাড়ির ভেতরও পাকা হয়ে গেছে। ওয়ার্ডে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। খুলনা বিভাগের বড় তিনটি সরকারি তেলের ডিপো এই ওয়ার্ডে। এখানে ফায়ার সার্ভিসের কোনো স্টেশন নেই। তবে এসব ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা, এলাকার এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বড় ব্যবসায়ী হওয়ায় তিনি বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করাটা কঠিন। 

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাদকের দৌরাত্ম্য

নগরের খালিশপুর এলাকার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ সড়ক আর ড্রেনেজব্যবস্থা সংস্কারের আওতায় এসেছে। এতে রাস্তাঘাটের সমস্যা কমে এলেও এলাকাবাসীর কাছে অস্বস্তি হয়ে আছে আলমনগর মোড় থেকে নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকার জলজট। ওয়ার্ডে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন থাকার ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও একটি কার্যকর কাঠামোর মধ্যে এসেছে। তবে পুরোনো সমস্যা হিসেবে এখনো রয়ে গেছে মাদকের দৌরাত্ম্য। ওয়ার্ডে এখনো পর্যন্ত স্থায়ী কোনো কাউন্সিলর কার্যালয় এবং কমিউনিটি সেন্টার নেই। 

খুলনা নগরের প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলস লিমিটেড, দৌলতপুর জুট মিল, হার্ডবোর্ড মিল, নিউজপ্রিন্ট মিল, বিজেএমসি আঞ্চলিক কার্যালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর ভান্ডার, টিসিবির গোডাউনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে। ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এ ওয়ার্ডের পূর্বে ভৈরব নদ, পশ্চিমে ১১, ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ড, উত্তরে ক্রিসেন্ট জুট মিল এলাকা এবং দক্ষিণে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি বানৌজা তিতুমীর। 

গত বুধবার ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কথা হয় এখানকার অন্তত ১৫ জন বাসিন্দার সঙ্গে। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই ওয়ার্ডের একটি নিজস্ব কার্যালয় ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের পাশাপাশি ওয়ার্ডের অন্যতম প্রধান সড়ক বিআইডিসি রোডের দুর্ভোগ নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম খুরশিদ আহম্মেদ পর পর দুই মেয়াদে নির্বাচিত। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সব কটিই প্রায় পূরণ হয়েছে। তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় ভাড়া নিয়ে চলে। সিটি করপোরেশনের টাকায় ২৫ শতাংশ জায়গা কেনা হয়েছে। বিআইডিসি রোডের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সড়কে ড্রেন হয়ে গেছে। খোয়া বিছানোর কাজ চলছে, এরপর কার্পেটিং হবে। এ জন্য কিছুটা সময় লাগবে।