আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

পানি কম থাকার সুযোগে ওয়েস্টিরিয়া টেক্সটাইল কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থাপনা নির্মাণের জন্য পানিপ্রবাহের জায়গায় ভরাটকাজ চালাচ্ছে।

গাজীপুরের শ্রীপুরের বেড়াইদেরচালা দোখলা গ্রামে লবলং খালে বালু ফেলে পানিপ্রবাহ বন্ধ করা হচ্ছে। গত রোববার দুপুরে তোলাছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা দোখলা এলাকায় লবলং খালের পানিপ্রবাহের পথে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। এতে পানি উপচে পড়ার ঝুঁকিতে আছে সেখানকার শতাধিক কৃষকের জমি।

গত রোববার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, দোখলা গ্রামের ওয়েস্টিরিয়া টেক্সটাইল লিমিটেড ও পারফ্যাটি ভেনমিলে চকলেট কারখানার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লবলং খালটি। এই খালের এক অংশে ছোট একটি সেতু। সেতুর দক্ষিণ পাশে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় খালে পানির পরিমাণ কম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পানি কম থাকার সুযোগে ওয়েস্টিরিয়া টেক্সটাইল কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থাপনা নির্মাণের জন্য পানিপ্রবাহের জায়গায় ভরাটের কাজ চালাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সেখানে বালু ফেলা শুরু করে তারা। এদিকে বালু ফেলার ফলে খালের পানির স্রোত একদম থেমে গেছে। এতে ভাটির দিকে পানি উপচে পড়তে শুরু করেছে। 

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে খালটির স্রোতোধারা বর্তমান এলাকা থেকে কিছুটা পশ্চিম দিকে ছিল। কিন্তু সময়ের আবর্তে এটি তার দিক পাল্টে বর্তমান এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই প্রবাহকে ভিত্তি করেই এখানকার কৃষিব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। হঠাৎ এই পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে পশ্চিম দিকের কৃষিজমি হুমকির মুখে পড়েছে। বৃষ্টি হলে পানি উপচে ফসলি জমিতে প্রবেশ করবে। এতে ফসল ডুবে যাবে। লোকজন জানিয়েছেন, খালটির আশপাশের ওই এলাকাগুলোতে ধান ও বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়। 

স্থানীয় আমান উল্লাহ নামের এক কৃষক বলেন, শ্রীপুরের ঐতিহ্যবাহী খালটিতে বালু ফেলে বন্ধ করা হচ্ছে। শত শত কৃষকের কৃষিজমি ঝুঁকির মুখে ফেলে এ ধরনের ভরাট এখনই বন্ধ করতে হবে। না হলে কৃষকদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। অপর স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘কারখানার লোকজন ইচ্ছামতো খাল বন্ধ করতে পারেন না। আমরা ক্ষতির মুখে পড়ব।’ একই এলাকার অপর বাসিন্দা আবদুল আউয়াল বলেন, এমনিতে দূষিত পানি, তার ওপর যদি এই পানি জমিতে প্রবেশ করে, তাহলে সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ খাল বাঁচাতে এগিয়ে আসা উচিত। 

খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে বালু ভরাট করার বিষয়ে ওয়েস্টিরিয়া টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার সিইও মো. শিব্বির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই জায়গা আমাদের কেনা সম্পত্তি। খালের জায়গা আরও পশ্চিমে। আমরা আমাদের নিজেদের কেনা জায়গা ভরাট করছি। খালটি আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলে প্রয়োজনে আমরা সহযোগিতা করব।’

বাংলাদেশ রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, পানির গতিপথ এভাবে বন্ধ করা আইনসম্মত নয়; বরং ডিমার্কেশন করে সরকারি উদ্যোগে খালের জায়গা চিহ্নিত করে খনন করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।  

শ্রীপুরের ইউএনও শোভন রাংসা বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’