কটিয়াদীতে বিএনপির সমাবেশ স্থগিত, বইঠা হাতে আ.লীগের ‘শান্তিমিছিল’

বইঠা হাতে কিশোরগঞ্জর কটিয়াদীতে ‘শান্তি মিছিল’ বের করে আওয়ামী লীগ। আজ সকালে বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ বুধবার সকালে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ করার পূর্ব ঘোষণা ছিল বিএনপির। কর্মসূচি সফল করতে কয়েক দিন আগে থেকে নানা প্রচারণাও চালানো হয়। শেষে কর্মসূচিটি আজ আর মাঠে গড়ায়নি। আজ সকালে নেতারা ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানান।

তবে বাসস্ট্যান্ডে বিএনপির কর্মসূচি বাতিল হয়ে গেলেও একই স্থান থেকে সমাবেশ শেষে ‘শান্তিমিছিল’ বের করে আওয়ামী লীগ। শুধু তা–ই নয়, বাসস্ট্যান্ড এলাকাটি বিকেল পর্যন্ত ছিল আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের দখলে।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি থেকে সরে আসার কারণ জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, কর্মসূচির শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। পুলিশের হাতেও লাঠি, আবার আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতেও লাঠি। এত লাঠির মধ্যে আওয়ামী লীগ ‘শান্তিমিছিল’ করতে পারলেও বিএনপির কর্মসূচিটি আর শান্তিপূর্ণ রইল না। নিশ্চিত বড় ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শেষে তাদের পিছু হটতে হয়।

কর্মসূচির শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। পুলিশের হাতেও লাঠি, আবার আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতেও লাঠি। এত লাঠির মধ্যে আওয়ামী লীগ ‘শান্তিমিছিল’ করতে পারলেও বিএনপির কর্মসূচিটি আর শান্তিপূর্ণ রইল না।
তোফাজ্জল হোসেন খান, আহ্বায়ক, কটিয়াদী উপজেলা বিএনপি

বিএনপির অভিযোগ, কর্মসূচির অনুমতি চেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কটিয়াদী থানা-পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়। কিন্তু আবেদনে সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো কর্মসূচি না করার পরামর্শ আসে পুলিশের কাছ থেকে। অপর দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি ঠেকিয়ে দেওয়ার প্রচারণা চালানো হয়। এ অবস্থায় কটিয়াদীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে রূপ ধারণ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপি আর মাঠে নামার সাহস দেখায়নি।

বিএনপি সাংগঠনিক শক্তি হারিয়েছে। কারও বাধা দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে বিএনপি স্বেচ্ছায় নির্বাসন যাপন বেছে নিয়েছে।
গিয়াস উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগ

তবে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকেরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে দলীয় সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় অনেকের হাতে বইঠা ছিল। সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন না। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন। বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মেয়র শওকত উসমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, সাবেক ভিপি ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগের সদস্য মইনুজ্জামান প্রমুখ।

সভা শেষে মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে আবার বাসস্ট্যান্ডে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষ হয়ে গেলেও দলের একাংশ বাসস্ট্যান্ড ত্যাগ করেননি। বিকেল পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন দলটির কর্মী-সমর্থকেরা। মিছিলে অনেকের হাতে বইঠা ছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কটিয়াদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালনের কোনো আবেদন তাঁরা পাননি। কর্মসূচি বাতিলের জন্য বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীর বাসায় পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেনি। এ অবস্থায় কর্মসূচি করতে না পারার দায় বিএনপি কেন পুলিশের ওপর চাপাচ্ছে, তা তাঁর বোধগম্য নয়।

বিএনপির অভিযোগ নিয়ে কথা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে। আজকের কর্মসূচি তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিএনপি সাংগঠনিক শক্তি হারিয়েছে। কারও বাধা দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে বিএনপি স্বেচ্ছায় নির্বাসন যাপন বেছে নিয়েছে।

শান্তিমিছিলে লাঠি-বইঠার অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু বইঠা ছিল। লাঠি ছিল না।