মণিপুরি, গারো ও খাসিয়াদের উৎসব ঘিরে চলছে প্রস্তুতি

মণিপুরিদের মহারাস উৎসব হবে আগামী ২৭ নভেম্বর। গত বছর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুর এলাকায়
প্রথম আলো ফাইল ছবি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার সমতল ও উঁচু–নিচু টিলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাস। বছরের নানা সময় নানা আচার–অনুষ্ঠান পালন করে তারা। তবে তাদের প্রধান উৎসবগুলো হয় শীতকালে। সেসব উৎসব নিয়ে চলছে নানা প্রস্তুতি। এই নভেম্বরে গারো, খাসি (খাসিয়া) ও মণিপুরিদের পৃথক বড় তিনটি উৎসব আছে। এসব উৎসব দেখতে ভিড় জমান দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকেরা।

গারোদের ওয়ানগালা
গারোদের অন্যতম বড় উৎসব ওয়ানগালা। সাধারণত শীতের শুরুতে নতুন ফসল ঘরে তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। গারো ভাষায় ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে গারোরা তাদের দেবতার কাছে ফসল উৎসর্গ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ১৯ নভেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়ি গারোপল্লির মাঠে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

গারো জনগোষ্ঠীর ওয়ানগালা উৎসব আগামী ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়ি গারোপল্লীতে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

খাসিয়াদের খাসি সেং কুটস্নেম
খাসিয়া জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎসব খাসি সেং কুটস্নেম। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার খাসিয়া জনগোষ্ঠীর এই ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির মাঠে দিনব্যাপী এই উৎসব হবে। উৎসব উপলক্ষে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মেলায় খাসিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবেন বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পান, তির, ধনুকসহ বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র থাকবে। সিলেট বিভাগের প্রায় প্রতিটি পুঞ্জি থেকেই এখানে এসে লোকজন উৎসবে যোগ দেবেন।

খাসিয়াদের সেং কুটস্নেম উৎসব হবে আগামী ২৩ নভেম্বর। গত বছর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া মাঠে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

মণিপুরিদের মহারাসলীলা
নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সাহিত্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে থাকা মণিপুরিদের প্রধান উৎসব মহারাসলীলা। ২৭ নভেম্বর কমলগঞ্জের মাধবপুরের শিববাজারে (জোড়া মণ্ডপে) ও আদমপুরের তেতইগাঁওয়ে আয়োজন করা হয়েছে এই উৎসবের। রাস উৎসবের দুটি পর্ব থাকে। দিনের বেলায় রাখাল নৃত্য আর রাতে মহারাস। রাখালনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণের শিশুকালের নানা লীলা তুলে ধরা হয়। রাতের বেলা শুরু হয় মহারাসলীলা। ভোর পর্যন্ত রাধাকৃষ্ণের নানান কাহিনি ফুটিয়ে তুলেন মণিপুরিরা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ক তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একটা সময় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এই উৎসবগুলো তাঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন এই উৎসবগুলোয় সবাই অংশ নেন। বিশেষ করে মণিপুরিদের মহারাস উৎসব দেখতে মণিপুরি জনগোষ্ঠীর বাইরের লোকজন বেশি থাকেন। সারা দেশ থেকে মানুষ আসেন। অন্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অনুষ্ঠানেও বাইরের মানুষ আসেন। তাঁদের এসব উৎসব যেন হারিয়ে না যায়, সে জন্য জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনেও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উৎসব করা হয়।