উদ্ধারের পর প্রথম বুঝতে পারে, তারা বেঁচে আছে

কেওক্রাডং পাহাড় থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ৮ জনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

পাহাড়ের খাদে পড়ার পর দশম শ্রেণির ছাত্রী উষসী ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাফাত অচেতন হয়ে গিয়েছিল। সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সহায়তায় সেখান থেকে উদ্ধারের পর প্রথম তারা বুঝতে পারে, তারা বেঁচে আছে। এর আগে তাদের বহনকারী জিপ গাড়ি (চাঁদের গাড়ি) পাহাড়ি খাদে পড়ে যেতে দেখেছে, কিন্তু তাদের কী হয়েছে আর কিছুই জানতে পারেনি।

পাহাড় দেখার জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রথমবার বান্দরবানে বেড়াতে এসেছিল এই দুই স্কুলশিক্ষার্থী। তারা এখন বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। ৫০০ মিটার পাহাড়ের খাদে পড়ে যাওয়ার পর কীভাবে বেঁচে এসেছে, আজ শনিবার সন্ধ্যায় সেই কথা বলতে গিয়ে রাফাত প্রথম আলোকে বলে, গাড়ি গড়িয়ে যাওয়ার সময় সে ছিটকে পড়ে একটি গাছে আটকে যায়। এরপরে আর কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখে, পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা।

আরও পড়ুন

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রুমা-বগা লেক-কেওক্রাডং সড়কের দার্জিলিংপাড়া ও রুমসংপাড়ার মাঝামাঝি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ফিরোজা বেগম (৫৩) ও জয়নাব খাতুন (২৪) নামের দুজন মারা গেছেন। ফিরোজা বেগম প্রথম আলোর সহসম্পাদক সজীব মিয়ার শাশুড়ি। জয়নাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া জিপ গাড়ির আরও ১১ জন আরোহী আহত হন। তাঁদের মধ্যে উষসী ও রাফাত দুজন। এ ছাড়া সজীব মিয়ার স্ত্রী নুসরাত জাহান রিজভীও (৩০) গুরুতর আহত হয়েছেন।

পাহাড়ি খাদে পড়ে যাওয়া জিপ গাড়ি। শনিবার দুপুরে রুমা-বগা লেক-কেওক্রাডং সড়কের পাশে
ছবি: সংগৃহীত

কেওক্রাডং পাহাড় থেকে ফেরার পথে ওই গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ি খাদে পড়ে যায়। ওই ভ্রমণ দলের সদস্যরা জানান, যে জিপগাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, তাতে চালকসহ ১৪ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে দুর্ঘটনার পরপরই চালক পালিয়ে গেছেন। বাকি ১৩ জন হতাহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা হতাহত সবাইকে উদ্ধার করে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনেন। সেখান থেকে আহত ১১ জনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরে গুরুতর আহত চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল হাছান বলেন, ১৩ জনকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁদের হাসপাতালে আনেন। ২ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।

দুর্ঘটনাস্থলে ৫০০ মিটার খাদে গভীর পড়ে যায় জিপ গাড়িটি। শনিবার দুপুরে
ছবি সংগৃহীত

দুর্ঘটনাকবলিত জিপগাড়িটির ঠিক পেছনের গাড়িতে থাকা মিথিলা প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যা নামে একটি সংগঠন থেকে তাঁরা ৫৭ জনের একটি দল কেওক্রাডং ভ্রমণে গিয়েছিলেন। পাঁচটি চাঁদের গাড়ি (জিপগাড়ি) নিয়ে গতকাল শুক্রবার বান্দরবান জেলা শহর থেকে তাঁরা বগালেকে গিয়েছিলেন। আজ সকালে কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় ভ্রমণ শেষে একসঙ্গে ফিরে আসছিলেন। পাহাড়ি সড়ক দিয়ে নামার সময় একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পাহাড়ি খাদে পড়ে গেলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় লোকজন ও বেড়াতে আসা পর্যটকেরা মিলে প্রাথমিক উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেন। পরে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।

দুর্ঘটনার শিকার জিপগাড়ির সামনের গাড়িতে ছিলেন ভ্রমণ দলের সদস্য চিকিৎসক কামরুন্নাহার। তিনি বলেন, ভ্রমণকন্যা সংগঠন থেকে দেশের বিভিন্ন পর্যটনস্পটে তাঁরা ঘুরে বেড়ান। এবার ২২৬তম ভ্রমণে কেওক্রাডং পাহাড়ে এসে দুর্ঘটনার শিকার হলেন।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এস এম আসাদুল্লাহ বলেন, ১৩ জনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন আছিয়া বেগম (৬৫), চিকিৎসক স্বপ্না (২৩), মাহফুজা ইসলাম রূপা (৩৬) ও নুসরাত জাহান রিজভী (৩০)। আহত একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আহত আকি ৮ জনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন উষসী নাগ (১৫), উষসীর মা জবা রায় নাগ (৪৫), রাফাত (১২), আমেনা বেগম (৬০), তাহমিনা তানজিম তালুকদার (১৯), আঞ্জুমান হক (৩৫), ইতু (১৬) ও তাননিম (২১)।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, নিহত দুজনের স্বজনেরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা এসে পৌঁছালে লাশ হস্তান্তরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।