সরকারের কাছে ‘তড়িৎ’ ৫০০ কোটি টাকা চায় চসিক

এক বর্ষায় চট্টগ্রাম নগরে ভেঙেছে ৩৮৮ সড়ক। আবার অরক্ষিত নালা-নর্দমা ও খালে পড়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এখন এসব ভাঙা সড়ক সংস্কার ও নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন।

সিটি করপোরেশনের আর্থিক সংকটের কারণে এ অর্থ বরাদ্দ দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে গত মঙ্গলবার চিঠি দেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তবে আর্থিক বরাদ্দ চাইলেও তা পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা এর আগে সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য অপসারণে যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্প অনুমোদনসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ চাইলেও তা মেলেনি বলে খোদ মেয়রই অভিযোগ করেছিলেন।

চট্টগ্রাম নগরে পাঁচ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি রাস্তাঘাট ভেঙে বেহাল হয়েছে। ৩৮৮টি সড়কের ১৪২ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর ভেঙেছিল ১০০ কিলোমিটার। ২০২৩ সালে ৫০ কিলোমিটার, ২০২২ সালে ১০০ কিলোমিটার ও ২০২১ সালে ৩৬ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়েছিল।

গত ছয় বছরে অরক্ষিত খাল ও নালায় পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৫ সালে দুজন, ২০২৪ সালে তিনজন, ২০২৩ সালে তিনজন, ২০২১ সালে পাঁচজন ও ২০২০ সালে দুজনের প্রাণহানি হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ জুলাই হালিশহরের আনন্দপুর এলাকায় তিন বছর বয়সী হুমায়রার মৃত্যু হয় মায়ের কর্মস্থলের পাশের নালায় পড়ে। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল নগরের কাপাসগোলায় হিজড়া খালে রিকশা উল্টে পড়ে গেলে মায়ের কোল থেকে পড়ে মৃত্যু হয় ছয় মাসের শিশু আনাবিয়া মেহেরিন সেহরীশের।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের ভাঙা সড়ক, নালার ঝুঁকিপূর্ণ স্ল্যাব এবং অরক্ষিত নালা ও খালের তালিকা করেছে। তালিকা অনুযায়ী ১৪২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে প্রয়োজন হবে ৪২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ১৮ হাজার ৬৬৩ বর্গমিটার স্ল্যাব ঠিক করতে লাগবে ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অরক্ষিত নালা ও খালে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিতে হবে ২১ কিলোমিটার। এতে খরচ হবে ২১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

সড়কে সৃষ্ট বড় গর্তে জমে আছে পানি। গাড়ি চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন চালকেরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

সিটি করপোরেশনের আর্থিক অপ্রতুলতার কারণে এসব জরুরি কাজ করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র শাহাদাত হোসেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, এবারের বর্ষায় চট্টগ্রামে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সেতু ও কালভার্ট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দর। এ কারণে প্রতিদিন নগরের রাস্তাগুলোতে বন্দরের লরি, ট্রাক ও বিভিন্ন সেবা সরবরাহমূলক সংস্থার গাড়ি চলাচল করে।

অতিবৃষ্টির কারণে বিভিন্ন সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। এতে বলা হয়, সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীদের। জরুরি পণ্য সরবরাহ, চিকিৎসাসেবাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এদিকে নগরের খাল ও নালার পাশে নিরাপত্তাবেষ্টনীর অপ্রতুলতার কারণে জলাবদ্ধতার সময় দুর্ঘটনার শঙ্কা চরম আকার ধারণ করেছে বলে চিঠিতে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, এ কারণে সম্প্রতি কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় নগরের রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট মেরামত করা ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তাবেষ্টনী স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব কাজে করপোরেশনের ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের আর্থিক অবস্থা অপ্রতুল হওয়ার কারণে কাজগুলো জরুরিভাবে করা যাচ্ছে না। এ জন্য বিশেষ আর্থিক বরাদ্দের প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবারের বৃষ্টিতে নগরে ১৪২ কিলোমিটার সড়ক ভেঙেছে। ঝুঁকিপূর্ণ নালা ও খালেও নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব কাজে সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন। কেননা সিটি করপোরেশনের টাকায় সব কটি কাজ করা সম্ভব নয়। সরকারি বরাদ্দ পেলে রাস্তার সংস্কারকাজ ও নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার কাজ দ্রুত করা সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এবারের বৃষ্টিতে নগরের অনেকগুলো সড়ক ভেঙে গেছে। বন্দর ও শিল্পকারখানার গাড়ি চলার কারণে ক্ষতি হয়েছে বেশি। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। আপাতত সিটি করপোরেশনের তহবিল দিয়ে মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু এ জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার তা সিটি করপোরেশনের নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরের রাস্তাঘাট ঠিক করতে, অরক্ষিত নালা-নর্দমা ও খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে প্রয়োজনীয় ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছি। এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটিই আমাদের প্রত্যাশা’।