বাকৃবিতে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মৌন মিছিলে ছাত্রলীগের ধাওয়া

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মৌন মিছিলে বাধা দেয় ছাত্রলীগ। বাধ্য হয়ে মিছিল অসম্পন্ন রেখেই কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষকেরা। মঙ্গলবার দুপুরে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির কারাবন্দী নেতা–কর্মীদের মুক্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মৌন মিছিলে বাধা দিয়েছে ছাত্রলীগ। আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ-সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘সোনালি দলের’ মিছিলটি মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ এবং কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ–সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে নেতা–কর্মীরা শিক্ষকদের ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে নেতা–কর্মীরা মিছিলটি ঘেরাও করে বন্ধ করে দেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শিক্ষকেরা বক্তব্য ছাড়াই কর্মসূচি শেষ করেন।

বিএনপিপন্থী শিক্ষক, প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মৌন মিছিল বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা। তখন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বাধা দিলে শিক্ষকেরা ভেটেরিনারি অনুষদের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। তাঁরা মিছিল নিয়ে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, পশুপালন অনুষদ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ হয়ে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ চত্বরে এলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা মুখোমুখি হন। বাধ্য হয়ে পশুপালন অনুষদের দিকে মোড় নেয় শিক্ষকদের মিছিলটি। এ সময় উত্তেজনামূলক স্লোগান দিয়ে শিক্ষকদের ধাওয়া করেন নেতা–কর্মীরা। একপর্যায়ে পশুপালন অনুষদের সামনে মিছিলটি ঘেরাও করে তাঁরা বন্ধ করে দেন। বাধ্য হয়ে বক্তব্য ছাড়াই শিক্ষকেরা কর্মসূচি শেষ করেন। ফেরার সময় ব্যানার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা ও শিক্ষকদের ওপর ঢিল ছোড়ার অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক।

সোনালি দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রক্টরের কাছে গতকাল সোমবার গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মৌন মিছিলের অনুমতি চাইলে তিনি ভেটেরিনারি অনুষদের সামনে থেকে মিছিল করতে বলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা ভেটেরিনারি অনুষদের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল শুরু করেন। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। মিছিল নিয়ে সামনে এগোলে তাঁদের পিছু নেন। পরে মিছিল ঘেরাও করেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কোনো বক্তব্য ছাড়াই তাঁরা মিছিল শেষ করতে বাধ্য হন। ফেরার সময় তাঁদের ব্যানার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

শিক্ষকদের ধাওয়া করার একপর্যায়ে ঘেরাও করে মিছিলটি বন্ধ করে দেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

মিছিলে বাধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রক্টর অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সোনালি দলের মিছিল নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ের বাইরে চলমান রাখায় ছাত্রলীগের কর্মীরা অবস্থান নিয়ে তাঁদের বাধা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী শিক্ষকেরা রাজনীতি করতে পারেন না। রাজনীতির সমর্থনে শিক্ষকদের অঙ্গসংগঠন থাকতে পারে। তবে জাতীয়ভাবে হরতাল–অবরোধের সমর্থনে শিক্ষকদের কোনো কর্মকাণ্ড থাকতে পারে না।

তবে সোনালী দলের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম হাফিজ বলেন, ‘মিছিলের জন্য আমাদের সময় দেওয়া হয়েছিল ২০ থেকে ২০ মিনিটি। সেখানে আমরা ১৫ মিনিটের মধ্যে মিছিল শেষ করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়ার কথা থাকলেও ছাত্রলীগের বাধায় আমরা যেতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রাজনীতি না করার নিয়ম থাকলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের শিক্ষকদের নাম কীভাবে আসে। সরকারের পক্ষে রাজনীতি করলে ঠিক আছে। আর আমাদের মৌন মিছিলে এত বাধা! আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে মৌন মিছিল করেছি।’