আমরা কারও লেজুড় হতে চাই না: ইইউ প্রতিনিধিদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সিলেটে নিজ বাসভবনে ইইউ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলে সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের ধোপাদিঘিরপার এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনবিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সিলেটে নিজ বাসভবনে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রতিনিধিদল বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে, সেগুলোর তিনি জবাব দিয়েছেন। তবে ইইউ প্রতিনিধিদল নির্বাচন নিয়ে নিজেদের কোনো মতামত দেয়নি, তারা শুধু শুনেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আজ বুধবার রাত আটটার দিকে সিলেট নগরের ধোপাদিঘীর পাড় এলাকার নিজ বাসভবনের নিচে সাংবাদিকদের বৈঠকের ব্যাপারে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে সন্ধ্যায় সেখানে ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তাঁর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের নিজের নির্বাচনী কার্যালয় ঘুরে দেখান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বললাম যে আমরা যেহেতু ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি চাই, অনেক দেশ আমাদের টানাটানি করে। সেখানে আমাদের সমস্যা হয়। আমরা কারও লেজুড় হতে চাই না। আমরা একটা ইনডিপেনডেন্ট কান্ট্রি। আমরা চাই ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার (নির্বাচন)। অনেক বড় বড় দেশ আমাদের দেশে অনেক কিছু বিক্রি করতে চায়। আমরা শুধু আমাদের দেশের মানুষের মঙ্গল যেটা হবে, সেটা করি। তারা জোর করে জিনিস বিক্রি করতে চায়, আমরা কিনি না। সে জন্য তারা আমাদের ওপর কিছুটা অসন্তুষ্ট। তখন তারা বিভিন্ন রকম অজুহাত নিয়ে আসে। বাট উই আর অন প্রিন্সিপল (নীতি), প্রিন্সিপল থাকলে অন্যরা শ্রদ্ধা করে। এইটা আমরা বুঝেছি। আপনি গরিব হইতে পারেন, কিন্তু আপনাকে সম্মান করে। সে জন্য আমাদের সম্মান-ইজ্জত অনেক বেড়েছে।’

ইইউ প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আছেন কি না জানতে চেয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যখন প্রশ্ন করল, আপনার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আছে কি না, বলেছি আছেন, আমিসহ ৫ জন। আমরা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে ছোট করে দেখি না। আমরা আমাদের ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছি। ওনারও ওনাদের মতো ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন। বলেছি, এই শহরটাতে সবার খুব ভালো সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের অপজিশন বিএনপির সঙ্গেও সুসম্পর্ক আছে। আমাদের এখানে ঝগড়াঝাঁটি নাই, মারামারি নাই। তাদের (বিএনপির) মেয়র (সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী) ছিলেন, তাঁর সঙ্গে কখনো কোনো বাজে ব্যবহার করা হয়নি। শেখ হাসিনার সরকার তাঁকে সহযোগিতা করেছে। প্রধানমন্ত্রী একটি বিষয় হলো উন্নয়ন। কে করল এইটা বিষয় নয়। বিএনপি নেতা করল, না আওয়ামী লীগ করল। এইগুলো আমরা বলেছি।’

প্রতিনিধিদল তাদের নিজস্ব কোনো মন্তব্য করেনি জানিয়ে আরও বলেন, ‘তারা নির্বাচন নিয়ে কোনো অবজারভেশন দেয়নি, শুধু শুনেছে।’

বিএনপির সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমন অভিযোগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আগেও বলেছি, আমরা কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করিনি। যাঁরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, যাঁদের সিসিটিভি ক্যামেরাতে ছবি উঠেছে, কিংবা তাঁদের লোক বলেছে, অমুক আমাকে হুকুম দিয়েছেন, শুধু তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেবল রাজনৈতিক কারণে একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। অনেক বিএনপি নেতা আছেন, যাঁরা সন্ত্রাসে জড়িত, আগুন জ্বালান কিংবা হুকুম দেন গাড়ি জ্বালানোর জন্য, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে।’

ইইউ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে বৈঠকের পর নিজ বাসভবনে সংবাদ ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার রাত আটটার দিকে সিলেট নগরের ধোপাদিঘির পাড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাতের অন্ধকারে ভোটের সুযোগ নেই জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির সময় আজিজ মার্কা ইলেকশন কমিশনে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার ছিল। আমরা এখন বায়োমেট্রিক করেছি। এইবারে কোনো ভুয়া ভোট হবে না। দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে যে রাতের অন্ধকারে ব্যালটিং হয়েছে। এ জন্য ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ) ব্যালট বক্স সবার সামনে থাকবে। দেখবে কয়টা ভোট হয়েছে। এইটা তৈরি করেছি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমরা একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি, যারা নির্বাচনের সময় সব দায়িত্বে থাকবে। তারা যদি মনে করে সরকারি কর্মকর্তা কিংবা পুলিশ যে কাউকে অন্য জায়গায় বদলি করে দেবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি আমরা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন করতে চাই। এর জন্য যা যা দরকার তা করা হয়েছে। দুনিয়ার সব লোক এসে দেখুক, আমরা কী চাই। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ বছরে দেশে অনেক নির্বাচন করেছেন। সবগুলোই সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আমাদের দেশের গণতন্ত্রের জন্য ৩০ লাখ লোক জীবন দিয়েছেন। সেটি তাঁদের জানিয়েছি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্বাচনের ইশতেহারে যেসব বিষয় জানিয়েছেন, সেগুলো বলেছি। আমরা ভবিষ্যতে স্মার্ট বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে চাই।’

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।