১৭৫টি বাঁক যেন মরণফাঁদ

স্থানীয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বাঁক নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক যাত্রী ও চালকের।

সড়কে বিপজ্জনক বাঁক। চাঁদপুর ও কুমিল্লার মধ্যবর্তী বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই আঞ্চলিক মহাসড়কের নারায়ণপুর অংশে। গতকাল দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুর ও কুমিল্লার মধ্যবর্তী বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই আঞ্চলিক মহাসড়কে বাঁক রয়েছে ১৭৫টির বেশি। এসব বাঁক পার হয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলছে হাজারো যানবাহন। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছেন যাত্রীরা। সময় অপচয়ের পাশাপাশি গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। স্থানীয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বাঁক নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক যাত্রী ও চালকের।

কুমিল্লা ও চাঁদপুর সওজ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে চাঁদপুরের বাবুরহাট থেকে মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদর হয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পেন্নাই এলাকা পর্যন্ত বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই নামে ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়। সড়কটি চালুর সময় বাঁক ছিল দুই শতাধিক। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সড়কটির বাঁক নিরসন, ভূমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য সংস্কারকাজে ব্যয় হয় ৮৯ কোটি টাকা। এতে ৪০টি বাঁক নিরসন করে সোজা করা হয়। প্রয়োজনীয় বরাদ্দের অভাবে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাঁক নিরসনের ওই কাজ বন্ধ হয়। সড়কটিতে এখনো ১৭৫টি ছোট-বড় বাঁক রয়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে সড়কটির ভাঙ্গারপাড়, ধনারপাড়, নাগদা, নারায়ণপুর, আশ্বিনপুর ও নায়েরগাঁও অংশে দেখা যায়, সেখানকার কয়েক গজ পরপর একটি করে বাঁক। এসব বাঁকে কাত হয়ে, হেলেদুলে যানবাহন চলছে। বিপজ্জনক বাঁক থাকা সত্ত্বেও চালকেরা পূর্ণ গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন। দুর্ঘটনার শঙ্কায় যাত্রীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

এ সড়কপথে যাতায়াতকারী মতলব দক্ষিণের বাসিন্দা মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বাসে বা অটোরিকশায় প্রায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ পথে যাতায়াত করছেন। এর ২০-২৫ গজ দূরত্বে এক-দুটি করে বাঁক। কিছু বাঁক খুবই বিপজ্জনক। এগুলো অতিক্রম করতে গেলে গাড়ি কাত হয়ে পড়ে। মনে হয় গাড়িটি এখনই উল্টে যাবে। খুবই আতঙ্কে থাকেন তখন। ঝুঁকি নিয়ে তবু ওই পথে যাতায়াত করছেন। বাঁকের কারণে সময়ের অপচয় হচ্ছে এবং চালকেরাও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন।

তিনি আরও বলেন, মতলব দক্ষিণ ও মতলব উত্তর উপজেলা এবং চাঁদপুর শহর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামসহ আশপাশের আরও কয়েকটি জেলায় যাতায়াতের একমাত্র সহজ ও সময়সাশ্রয়ী যোগাযোগব্যবস্থা হচ্ছে এ সড়কপথ। প্রতিদিন এ সড়কপথে দুই থেকে তিন হাজার বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ আরও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। তাঁর অভিযোগ, সড়কটির বাঁক নিরসনে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে সওজ কর্তৃপক্ষ। ঘনঘন বাঁকের কারণে সড়কটিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। হতাহত হচ্ছেন যাত্রীরা। এসব বাঁক যেন যাত্রীদের মৃত্যুফাঁদ।

এ সড়কপথের যাত্রীবাহী বাস জৈনপুরী এক্সপ্রেসের চালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রাস্তাডার এট্টু পরপর বাঁক। বাঁকে গাড়ি টার্ন করা ঝুঁকিপূর্ণ। তবু ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাইতে অয়। এতে দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ির চাকাও নষ্ট অয়। এইডা সড়ক নাকি নরক আমার প্রশ্ন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘হেগো (সওজ) অবহেলায় ১৭ বছরেও বাঁকগুলি ঠিক অইল না।’

মতলব-ঢাকা বাসচালক এবং মতলব-গৌরীপুর অটোরিকশাচালক সমিতি সূত্র জানায়, এ সড়কটিতে প্রতি মাসে গড়ে তিন-চারটি দুর্ঘটনা ঘটে। বছরে ঘটে ৪০-৪২টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে দুই শতাধিক যাত্রী হতাহত হচ্ছেন। চাঁদপুর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামসুজ্জোহা বলেন, সড়কটির বাঁক নিরসনে বরাদ্দ চেয়ে সম্প্রতি একটি প্রকল্প তৈরি করে সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে বাঁক নিরসনের কাজ ফের শুরু হবে। বাঁক নিরসনে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ ভিত্তিহীন।