‘ভোট দিতে সময় নাগে না বাপু, খালি গেনো আর আসিনো’

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের তেমন কোন লাইন দেখা যায়নি। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে একটার দিকে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী বিএল উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রেছবি : প্রথম আলো

‘আগের দিনোত ভোট দিবা আসিলে লাইন ধরিবা নাগে, সিরিয়াল নিবা নাগে, এইলা এ্যালা নাগে না। ভোট দিতে বেশি সময় নাগে না বাপু, খালি গেনো আর আসিনো।’ আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বোদা উপজেলার পাথরাজ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হয়ে কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় ভোটার পবিজান বেগম (৬২)।

শুধু পবিজান বেগমই নন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় ভোটকেন্দ্রে আসা ভোটাররা ঝামেলামুক্তভাবে দ্রুত ভোট দিতে পেরেছেন। ভোটারদের লাইনেও দাঁড়াতে হচ্ছে না।

আরও পড়ুন

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বোদা উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। সুনশান নীরবতায় চলে ভোট গ্রহণ। স্বল্পসংখ্যক ভোটার ভোট দিতে আসায় ঝামেলমুক্তভাবে ব্যালটে দ্রুত ভোট দেওয়া হয়ে যাওয়ায় ভোটারদের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বোদা উপজেলার অন্তত ছয়টি ভোটকেন্দ্রে ঘুরে ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা যায়নি। তবে স্বল্পসংখ্যক নারী ও পুরুষ ভোটার এসে নীরবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে চলে গেছেন। যদিও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বলছিলেন, দুপুরের পর ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে পারে। নারী ভোটাররা গৃহস্থালির কাজ সেরে ভোট দিতে আসবেন বলে আশা করছেন তাঁরা।

বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে বোদা উপজেলার জামাদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে কিছুসংখ্যক লোক তাঁদের প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে মাঝেমধ্যে দুয়েকজন ভোটার এসে ভোট প্রয়োগ করছেন। এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ৪ হাজার ১৯ জন। বেলা ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত এই কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৪৫০টি। অর্থাৎ ৪ ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।

উপজেলার পাথরাজ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ভোটারদের কোনো সারি নেই, তবে পৃথক পৃথকভাবে দুয়েকজন নারী-পুরুষ কক্ষে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন। এই কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৫৫১ জন ভোটারের মধ্যে দুপুর ১২ পর্যন্ত মোট ৫৫০ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। অর্থাৎ ৪ ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বোদা উপজেলার ভাসাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি পোলিং এজেন্টরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন। ভোটাররা নীরবে একে একে গিয়ে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। ভিড় না থাকায় কাউকেই লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। এই কেন্দ্রে মোট ৩ হাজার ভোটারের মধ্যে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত মোট ৪১৯ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। অর্থাৎ পৌনে ৪ ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

উপজেলার ময়দানদিঘী বিএল উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৯২১ জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৭৪২টি, তবে ভোট দিতে কাউকে লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। ৪ ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ময়দানদিঘী বিএল উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হলেন কোয়ারীর মেল এলাকার বাসিন্দা হরিন্দর বর্মণ (৫৮)। ভোট দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বলেন, ‘এইবার ভোট দেওয়া খুপে সহজ। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়া যাছে। তিনখান ব্যালট পটাপট সীল দিয়া দিনু। লাইনো নাই, ভিড়ও নাই। হামরা কাম-কাজ থুয়া ভোট দিবা আইচ্ছি, হামার তানে ভিড় না থাকিলেই ভালো।’

জামাদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সকাল থেকেই ভোটাররা একে একে এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। একসঙ্গে বেশি ভোটার না আসায় দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে না। তবে ভোটাররা ভোট দিতে আসছেন।

ভাসাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাহলুল ইবনে শায়ের বলেন, ‘ভোটাররা এসে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। এ জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় না। আশা করছি, দুপুরের পর ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়বে। কারণ, অনেকেই হয়তো গৃহস্থালির কাজকর্ম সেরে ভোট দিতে আসবেন।’

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় ভোট গ্রহণ চলছে। ২ উপজেলায় মোট ১৩১টি ভোটকেন্দ্রে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ১৬০ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে বোদা উপজেলায় মোট ৬৪টি ভোটকেন্দ্রে ১ লাখ ৯৭ হাজার ১৭২ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ ছাড়া দেবীগঞ্জ উপজেলায় মোট ৬৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোটার ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৮ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ২ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মোট ১২ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ সুকাতু প্রধান উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ধীরেন্দ্র নাথ রায়কে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল ৯টার পরপরই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ধীরেন্দ্র নাথ রায় একজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এ সময় তিনি কোনো এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন বলে আমার কাছে অভিযোগ আসে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি বাড়ি চলে গেছেন।’