রাজশাহী নগরে ‘পুকুর চুরি’ করে কলাবাগান

রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকায় পুকুর ভরাট করে কলাগাছ লাগানো হয়েছে। আজ বুধবার তোলাছবি: প্রথম আলো

দেড় একর আয়তনের পুকুরটি গত মার্চ মাসের শেষের দিকে ভরাট করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ দল অভিযান চালিয়ে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এরপর বিষয়টির আর কেউ খোঁজ নেননি। আজ বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরটি পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে কলাবাগান তৈরি করা হয়েছে।

এ ঘটনা রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকার। অবৈধভাবে সেখানে পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে। যদিও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত)-২০১০ অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে জলাধার সম্পর্কিত বিধিনিষেধ শিথিল করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে আজ বুধবার রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদা পারভীন বলেন, তাঁরা সেখানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছিলেন। তারপর কেউ কিছু জানাননি। যে কর্মকর্তা সেখানে অভিযান চালিয়েছিলেন, বিষয়টি তাঁকে দেখার জন্য বলবেন।

জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সরকার অসীম কুমার বলেন, মালিকপক্ষ ওই পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছিলেন। বর্তমানে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেলে সরেজমিনে দেখেশুনে তারপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ওই পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়নি। রাতের বেলা পুকুর ভরাট করার কারণে পর তাঁরা আর অভিযান চালাতে পারেননি।

মেহেরচণ্ডী এলাকায় ওই পুকুর ভরাটের বিষয়ে গত ৮ এপ্রিল প্রথম আলোয় ‘রাজশাহী নগরে ‘পুকুর চুরি’, প্রশাসন জানে না’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিন রাত ১২টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাকিব হাছান খান। তিনি পুকুর ভরাট করায় আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তখন সাকিব হাছান খান বলেছিলেন, জরিমানার টাকা সঙ্গে সঙ্গে আদায় করা হয়েছে এবং তাদের (মালিকপক্ষ) জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরে এই পুকুর ভরাট করা হলে তাদের গাড়ি জব্দ করাসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ওই অভিযানের কয়েক দিন পর আবার পুকুর ভরাট করা শুরু হয়। পুরোপুরি ভরাট করার পর কলাগাছ রোপণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুকুরটির মালিক ছিলেন নাটোরের গোলাম মাওলা নামের এক ব্যক্তি। তাঁর কাছ থেকে কয়েকজন ওই জমি কিনে নিয়েছেন। তাঁদের একজন বাগমারা উপজেলার আত-তিজারা গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম। গত এপ্রিল মাসে তিনি জানিয়েছিলেন, পুকুরটি কেনার পরিকল্পনা করছেন। পরে জানা যায়, তিনি পুকুরটি কিনেছেন এবং ভরাট করেছেন। এ বিষয়ে জানতে আজ একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পুকুর ভরাটের তালিকা করে থাকে। তাদের মতে, গত এক দশকে রাজশাহী শহরের ৯৭ ভাগ পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। যদিও রাজশাহী জেলা প্রশাসনের দাবি, অবৈধ পুকুর ভরাট বন্ধে তারা ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান নিয়েছেন। ৮ এপ্রিল জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানিয়েছিলেন, ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে পুকুর ভরাট বন্ধ করার ব্যবস্থা করবেন। এ ব্যাপারে আবার কথা বলার জন্য আজ যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আরও পড়ুন