মানিকগঞ্জে সংঘর্ষের মামলায় বিএনপির চারজন রিমান্ডে, আতঙ্কে বাড়িছাড়া নেতা-কর্মীরা

সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মানিকগঞ্জ শহরের খালপাড় এলাকায়
প্রথম আলো ফাইল ছবি

মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের চার নেতা-কর্মীর রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ রোববার দুপুরে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। আদালতের বিচারক এলেনা আক্তার আসামিদের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

যাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে, তাঁরা হলেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, পৌরসভা যুবদল নেতা সেলিম মোহাম্মদ, ছাত্রদল কর্মী রুবেল মাহমুদ ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক ওরফে শুভ।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জিন্নাহ খান মামলার অন্যতম আসামি। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনিও বাড়িছাড়া। জিন্নাহ খান বলেন, গতকাল শনিবার বিকেলে পুলিশ তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায়। তিনি বাড়িতে না থাকায় তাঁর স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে পুলিশ।

চারজনকে এক দিন করে রিমান্ডে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও জনসাধারণের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত করায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আসামিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বেলা ১১টার দিকে শহরের উত্তর সেওতা এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে খালপাড় এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী ও সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পাঁচটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

এ ঘটনায় ওই দিন রাতে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল লিটন বাদী হয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৩৩ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২ হাজার ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল থেকে সদর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, পৌরসভা যুবদল নেতা সেলিম মোহাম্মদ ও ছাত্রদল কর্মী রুবেল মাহমুদকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর গত শুক্রবার বিকেলে পুলিশ বাড়ি থেকে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার এই চারজনকে এক দিন করে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। মামলার পর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ফলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িছাড়া আছেন নেতা-কর্মীরা।

জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মারধর করেন। উল্টো বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এই অগণতান্ত্রিক সরকার ও সরকারের জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন-সংগ্রামে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।