দুই কারণে চট্টগ্রামে ডিমের দাম পাইকারিতে কমেছে, খুচরায় এখনো বাড়তি

পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হচ্ছে ডিম। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে
ছবি জুয়েল শীল

অবশেষে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। পাইকারিতে ডিমের দাম নির্ধারণ হয় প্রতি পিস হিসেবে। এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে একটি ডিম বিক্রি হয়েছিল সাড়ে ১১ থেকে ১২ টাকায়, এখন তা ৮ টাকা ৬০ পয়সায় নেমে এসেছে।
বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়েছে ও মাছের দাম কমেছে।

এ জন্য ডিমের ওপর ভোক্তাদের চাপ কমেছে। ডিমের দাম কমার পেছনে এই দুই কারণ চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পাইকারিতে কমলেও খুচরায় এখনো ডিমের দাম বাড়তি রয়ে গেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে এক সপ্তাহ আগেও ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়।

পাইকারি বাজারে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হচ্ছে ডিম। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে
ছবি জুয়েল শীল

আজ বেলা ১১টার দিকে নগরের ২ নম্বর গেটের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে ডিম কিনছিলেন বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আসগর। বাড়তি দাম নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, কোথাও বিক্রি হচ্ছে ডজন ১২০ টাকা, কোথাও ১৪০ টাকা। বাসার পাশের এই বাজার থেকে এক ডজন ডিম কিনতে তাঁর খরচ হয়েছে ১৪০ টাকা।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশের বাজারে ডিমের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। তখন খুচরা পর্যায়ে দাম চলে গিয়েছিল ২০০ টাকা বা তারও বেশি। এরপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে, তবে তা ডজনপ্রতি ১০০ টাকার নিচে নামেনি। চট্টগ্রাম নগরের ডিমের পাইকারি আড়তগুলোয় এক সপ্তাহ আগে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ১১ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আজ বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৯ টাকায়। ফলে দাম কিছুটা কমেছে। তবে খুচরাতে কোথাও প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা, কোথাও ১১ টাকা, আবার কোথাও ১১ টাকা ৬০ পয়সা দরে।

আতুরার ডিপো এলাকার মুদিদোকানি মো. সালাউদ্দিন প্রতি ডজন বিক্রি করছেন ১৪০ টাকায়। এই দোকানি জানালেন, তিনি বাড়তি দরে কিনেছেন। তাই এখনো দাম কম রাখতে পারছেন না। কাল শুক্রবার ডিম আনবেন, তখন নতুন দরে বিক্রি করবেন।

পাইকারি বাজারে ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতা। আজ সকাল নয়টায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে।
প্রথম আলো।

পাইকারিতে ডিমের দাম কমার বিষয়ে বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুর। তিনি জানান, বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করেছে। মাছের সরবরাহও ভালো।

এ কারণে ডিমের চাহিদা কম। আবদুল শুক্কুর বলেন, তিন মাস আগেও প্রতিদিন চট্টগ্রাম জেলায় ২০ থেকে ২৫ লাখ ডিম বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫ লাখ। মূলত চাহিদা কম থাকায় পাইকারিতে দাম ৯ টাকার মধ্যে এসেছে। এ ছাড়া খুচরা পর্যায়ে আর কয়েক দিনের মধ্যেই প্রভাব পড়বে। দাম কমবে।

পাহাড়তলী বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা কম। ডিমের সরবরাহ ভালো। দোকানি মোহাম্মদ মিজান বলেন, প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। অন্যদিকে দেশি হাঁস ও দেশি মুরগির ডিমের দর প্রতি ডজন ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। হাঁস ও দেশি মুরগির ডিমের চাহিদা কম।

পাহাড়তলী বাজারে কথা হয় ক্রেতা শফি উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি এক হালি ডিম নেন ৪০ টাকায়। শফি উদ্দিন বলেন, ‘দামে কোনো ভারসাম্য নেই। আজ হালি ৪০ টাকা তো কাল ৫০ টাকা। কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’

পাহাড়তলীর দোকানিরা বলছেন, চট্টগ্রামের বাজারে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, পাবনা ও কক্সবাজার জেলার ডিম বেশি পাওয়া যায়। মুরগির খাবারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। যে খাবারের প্রতি কেজির দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, তা এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনছেন খামারিরা। কখনো কখনো ৬০ টাকারও বেশি পড়ছে। এ কারণে খামারিদের কাছ থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে, তবে এখন কমে আসছে।