কাজের স্বীকৃতি পেলে মানুষ আরও উদ্বুদ্ধ হয়

বিনা মূল্যে মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য সম্মাননা জানানো হয় দন্ত চিকিৎসক সুশান্ত কুমার বিশ্বাসকে। মাগুরার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ছবি: প্রথম আলো

দন্ত চিকিৎসক সুশান্ত কুমার বিশ্বাস বিসিএস ১০তম ব্যাচের ক্যাডার ছিলেন। ৩৫ বছর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ২০১৯ সালে চাকরিজীবন শেষ করেন। মাগুরা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায়ও তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অবসরে যাওয়ার পর থেকে নিজ গ্রাম শ্রীপুর উপজেলার জোৎশ্রীপুরে প্রতি রোববার এলাকার মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সাধ্যমতো ওষুধও সরবরাহ করেন তিনি।

মানবসেবায় গুরুত্বপূর্ণ এ অবদান রাখার কারণে চিকিৎসক সুশান্ত কুমার বিশ্বাসকে গত রোববার বিকেলে মাগুরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হয়েছে। তিনিসহ মাগুরার ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ সম্মাননা জানানো হয়। সম্মাননা পেয়ে চিকিৎসক সুশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কর্মজীবনে সব সময় মানুষের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখনো করছি। তবে এই স্বীকৃতি ও সম্মাননা আমাকে আরও বেশি ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। এটা অনেকটা বুস্টার ডোজের মতো কাজ করবে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ‘ভালো কাজের নাগরিক অনুশীলন, স্বীকৃতি দেবে জেলা প্রশাসন’—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গত বছর স্বাধীনতা দিবস থেকে এ আয়োজন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় মাগুরার ৭০–এর বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে এ স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।

রোববার যেসব প্রতিষ্ঠান সম্মাননা পেয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে মাগুরা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। প্রায় দেড় যুগ ধরে অটিজমে আক্রান্ত অর্ধশতাধিক শিশুকে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করায় এ প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিডি ক্লিন নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতি সপ্তাহে একদিন জেলার একটি এলাকা পরিষ্কার করে। এ কারণে এই সংগঠন পেয়েছে সম্মাননা।

কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বৃক্ষরোপণসহ পরিবেশ সংরক্ষণে বিভিন্ন অবদান রাখার কারণে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে গ্রিন ভয়েস নামের একটি সংগঠনকে। মাগুরার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে অবদান রাখার কারণে ইতিহাস গবেষক কাজী তাসুকুজ্জামানও পেয়েছেন সম্মাননা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম শেখ প্রধান অতিথি হিসেবে এসব সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

বিডি ক্লিনের জেলা সহসমন্বয়ক আকাশ জোয়ার্দার বলেন, ‘এই স্বীকৃতি পাওয়ার পর আমরা সবাই তুঙ্গে আছি। দীর্ঘদিন ধরে মাগুরা শহরঘেঁষা নবগঙ্গা নদীর আবর্জনা পরিষ্কারের একটা পরিকল্পনা করছিলাম আমরা। এটার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছিলাম। এই স্বীকৃতি আমাদের সেই পথ তৈরি করে দিয়েছে।’

গ্রিন ভয়েসের সভাপতি ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘ভালো কাজের স্বীকৃতি পেলে মানুষ আরও বেশি ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হয়। ছোট ছোট উদ্যোগ যখন অনেক বেশি মানুষ নিতে থাকবে, তখন সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন সহজ হবে। এই স্বীকৃতি পাওয়ার পর আমাদের সদস্যদের মধ্যে আরও বেশি ভালো কাজ করার শক্তি তৈরি হয়েছে।’

মাগুরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি উত্তম চর্চা অনুশীলনকারীদের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করা হলে সমাজের অন্যরাও উৎসাহিত হবেন। এতে সমাজের ইতিবাচক কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।’