৭০ বছর পর মায়ের দেখা পাওয়া কুদ্দুস মুন্সী বাগমারায় মারা গেছেন

দীর্ঘ ৭০ বছর পর মায়ের সঙ্গে ছেলের দেখা। ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাববাদ গ্রামেছবি: প্রথম আলো

৭০ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিলেন ১০ বছরের আবদুল কুদ্দুস মুন্সী। ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ৮০ বছরের বৃদ্ধ ছেলে ফিরে এসে শতবর্ষী মা মঙ্গলের নেছার সঙ্গে দেখা করেন। দেশব্যাপী আলোচিত কুদ্দুস মুন্সী বার্ধক্যজনিত রোগে মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামে তিনি মারা যান। পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।

আবদুল কুদ্দুসের ছেলে বাবু হোসেন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে বলেন, মৃত্যুর আগে তাঁর বাবা অসুস্থ ছিলেন। তিনি বৃদ্ধা মা ও বোনদের খুঁজে পেয়েছিলেন, এটাই সান্ত্বনা। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকার জন্য বলা হলেও তিনি থাকেননি। সন্তানদের টানে বারুইপাড়াতে ফিরে আসেন।

আরও পড়ুন

আবদুল কুদ্দুসের মায়ের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামে। তাঁর মা পাশের বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাববাদ গ্রামে তাঁর মেয়ের বাড়িতে থাকতেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মাকে দেখার পর নভেম্বরে আবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গিয়েছিলেন কুদ্দুস। ১২-১৩ দিন মায়ের সঙ্গে থাকেন, কথা বলেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর শতবর্ষী মা মারা যান।

বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামে বসবাস করতেন বৃদ্ধ আবদুল কুদ্দুস। ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সিংসাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী ফেসবুকে কুদ্দুসকে নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তাঁর বাবা, গ্রাম ও উপজেলার নাম উল্লেখ করে আপনজনদের সন্ধান চাওয়া হয়। একপর্যায়ে তাঁদের সন্ধান পান।

আরও পড়ুন

আবদুল কুদ্দুস নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের মৃত কালু মুন্সীর ছেলে। বয়স যখন ছয়-সাত, তখন তাঁর বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর মা ছেলেকে পড়াশোনার জন্য ফুপা পুলিশের দারোগা আবদুল আওয়ালের কাছে রাজশাহীর বাগমারায় পাঠান। সেখানে ফুফুর বকা খেয়ে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে নিখোঁজ হন। ৭০ বছর পর মা, বোন ও আত্মীয়স্বজনকে ফিরে পেয়ে ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্তানদের নিয়ে শতবর্ষী মাকে দেখতে আশ্রাববাদ গ্রামে বোন ঝরনা বেগমের বাড়িতে যান তিনি। তখন নবীনগরের বাড্ডা গ্রামের জন্মভিটা ও বাবার কবর জিয়ারত করেন। এক মাস চার দিন পর ২ নভেম্বর স্ত্রীকে নিয়ে আবার মায়ের কাছে যান। এরপর আর মায়ের সঙ্গে কুদ্দুসের থাকা হয়নি। তবে মুঠোফোনে নিয়মিত কথা বলতেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর শতবর্ষী মা মারা যান।