বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের মনোনয়ন চান ১৩ নেতা

বগুড়া জেলার মানচিত্র

বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৩ নেতা। আবেদনের সঙ্গে জীবনবৃত্তান্ত ছাড়াও দলে নিজেদের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। তাঁদের অনেকেই এখন ঢাকায় অবস্থান করে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তদবির করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন ১৩ নেতা। এর মধ্যে জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও সাবেক চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনও আছেন। তিনি দেড় দশক ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে আছেন।

বগুড়া জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। নির্বাচনে ভোটারসংখ্যা ১ হাজার ৬২৫। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। ভোটারদের মধ্যে আছেন উপজেলা পরিষদের ১২ জন চেয়ারম্যান, ২৪ ভাইস চেয়ারম্যান, বগুড়ার ১২ পৌরসভার ১২ মেয়র, ১৬০ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর, ১০৯ ইউপি চেয়ারম্যান এবং ১ হাজার ৩০৮ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য।

নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) জেলা শাখার সভাপতি মোস্তফা আলম নান্নু। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা মোস্তফা আলম ২০০৯ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মওদুদ আহমেদের সঙ্গে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতা। তিনি ২০১৯ সালে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির প্রার্থী গোলাম মো. সিরাজের কাছে হেরে যান। বগুড়া পৌরসভার মেয়র পদে একাধিকবার ভোটে হেরে এবার জেলা পরিষদে মনোনয়ন চেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম। তিনি বগুড়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।

জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান-১ এ কে এম আছাদুর রহমান। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সুলতান মাহমুদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, বগুড়া জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার, বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আলোচিত পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান আকন্দ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফুজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের সহধর্মিণী কোহিনূর মোহন এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সাহজাহান।

মনোনয়নপ্রত্যাশী সুলতান মাহমুদ খান বলেন, ‘নব্বই দশকে ছাত্রলীগ থেকে এখন জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিচ্ছি। এখন তারুণ্যের জয়জয়কার চলছে। দলে অবদান, ত্যাগ ও যোগ্যতার বিচারে মনোনয়ন দেওয়া হলে মনোনয়ন আমিই পাব।’

মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দারও। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগে দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জামায়াত-বিএনপির অসংখ্য হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। ৭৮টি মামলা হয়েছে। ২১ বার জেলে যেতে হয়েছে। এসব অবদান মূল্যায়ন করা হলে মনোনয়ন আমিই পাব।’

এদিকে শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ নানা কারণে বগুড়ার রাজনীতিতে আলোচিত। তিনি গত বছর অনুষ্ঠিত বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিক নৌকার প্রার্থীর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ভোট পেয়ে আলোচনায় আসেন। তবে বিএনপি-সমর্থিত ধানের শীষ প্রার্থীর কাছে হেরে যান মান্নান। তিনি বলছেন, আওয়ামী লীগ তাঁর প্রকৃত ঠিকানা। এ কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। দল থেকে মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসানের মনোনয়ন চেয়েছেন বলেও চাউর হয়েছে। তবে এই খবর সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। চেয়ারম্যানের চেয়ারের জন্য নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবেই। তবে বর্তমান প্রশাসক মকবুল হোসেন বয়সে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ও ব্যক্তিগতভাবে সৎ মানুষ। চেয়ারম্যান পদ তাঁরা প্রাপ্য।