সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট দুপুরে স্থগিত, সন্ধ্যায় প্রত্যাহার
সিলেটে ইজারা বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া ও জেলা প্রশাসকের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছিল। তবে সাত ঘণ্টা পর বেলা একটার দিকে প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করেন পরিবহনশ্রমিক নেতারা। পরে বিকেল তিনটার দিকে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা এবং পরিবহনমালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বৈঠকে বসেন। সেখানে প্রশাসনের আশ্বাসে সন্ধ্যা সাতটার দিকে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল ছয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত সাত ঘণ্টা ধর্মঘট চলাকালে দুর্ভোগের শিকার হন সিলেট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষজন। অনেকে সকালে ঘর থেকে বের হয়ে বিপাকে পড়েন। যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশ সিলেটের কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বসে সময় পার করেন। আবার কিছু যাত্রী গন্তব্যে যেতে না পেরে বাড়ি ফিরেছেন। বেলা একটার দিকে ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা দেওয়ার পর যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এরপরও মঙ্গলবার দিনভরই যানবাহন চলাচল কিছুটা কম লক্ষ করা গেছে।
এদিকে বিকেলে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীর সভাপতিত্বে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে পরিবহনশ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে সিলেটের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আজিজুল ইসলাম, সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম, সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, সিলেটের পুলিশ সুপার ও মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার পরিবহনমালিক, শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বিভাগীয় কমিশনার দাবিদাওয়ার বিষয়গুলোর বিষয়ে আশ্বাস দেন। গণপরিবহনের ওপর আরোপিত বর্ধিত ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ পণ্য পরিবহনের সব সমস্যা সমাধানেরও আশ্বাস দেন তিনি। পাশাপাশি পাথর উত্তোলন এবং এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য লিখিতভাবে মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে প্রেরণ করবেন বলে জানান। এসব আশ্বাসের পরই পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানান।
জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ছয় দফা দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—সিলেটের সব পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালুমহাল এবং পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া; বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণপরিবহনের ওপর আরোপিত বর্ধিত ট্যাক্স প্রত্যাহার; সিলেটের সব ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধ, বিদ্যুতের মিটার ফেরত ও ভাঙচুর করা মিলের ক্ষতিপূরণ; সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে প্রত্যাহার এবং বালু-পাথরসহ পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানি না করা।
গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরের বারুতখানা এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিল জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এর আগে গত বুধবার সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আয়োজনে নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ওই সময় ধর্মঘট কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন পরিবহনশ্রমিকেরা। ওই সভায় উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে সিলেটের জেলা প্রশাসককে ‘ব্যর্থ ও অদক্ষ’ দাবি করে তাঁর পদত্যাগ চেয়ে বক্তব্য দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। তবে বক্তব্যে তিনি পরিবেশের ক্ষতি করে পাথর উত্তোলনেরও বিরোধিতা করেছিলেন।
এদিকে গত শনিবার থেকে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া এবং জেলা প্রশাসকের অপসারণসহ পাঁচ দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিকেরাও ধর্মঘট পালন করছেন। তবে জামায়াতে ইসলামীপন্থী পরিবহনমালিকদের একটি পক্ষ এ কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ধর্মঘটের সঙ্গে সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা, অটোটেম্পু, ট্যাক্সি, ট্যাক্সি কার মালিক সমিতিও সম্পৃক্ত নয় বলে ঘোষণা দিয়েছে।