‘মৃত্যুর আগে ছেলের গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দেখে যেতে চাই’
‘রোগশোকে আমি জর্জরিত। শরীর আর চলছে না, নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছি, তবুও সুস্থ হতে পারছি না। ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারছি না। এক ছেলে গুমের শিকার হয়েছে, অপর ছেলে দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ। বিগত ১১ বছর ছেলের সন্ধানে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো হদিস পাইনি। থানা-পুলিশ মামলা নেয়নি। আদালতেও মেলেনি সহযোগিতা। গুমের শিকার ব্যক্তিদের তদন্তে গঠিত গুম কমিশনে ছেলের গুমের তথ্য জমা দিয়েছি। মৃত্যুর আগে অন্তত ছেলের গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দেখে যেতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকার আমার ছেলের গুমের বিচার করবে, আমি সেই প্রত্যাশা করছি।’
নির্যাতিত ব্যক্তিদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনীতে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় বক্তব্য দেন গুমের শিকার যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানের মা রওশন আরা বেগম। গলায় ছেলের ছবি ঝুলিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে ২০১৪ সালের ২১ মার্চ মধ্যরাতে শহরের ওয়াপদা এলাকার সরকারি বাসা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। দীর্ঘ ১১ বছর তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আবদুর রহিম। দিবসের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মানবাধিকারকর্মী শেখ আশিকুন্নবী।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সাপ্তাহিক আনন্দ তারকা পত্রিকার সম্পাদক এম মামুনুর রশিদ, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মহিউদ্দিন খন্দকার, লায়ন্স ক্লাব অব ফেনীর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জাফর উল্লাহ, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক নাজমুল হক।
নির্যাতিত ব্যক্তিদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবসের মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রতিটি সরকারের আমলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তবে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে তা চরম আকার ধারণ করে। এই সময় র্যাব, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্যাতন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে। অধিকার–এর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারে আমলে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৮২ ব্যক্তি নির্যাতনের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২০২৪–এর ৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২০ জুন পর্যন্ত ১০ ব্যক্তি নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন।