নোয়াখালীতে পোলট্রি ফিড কারখানায় ‘হেলমেট’ বাহিনীর হামলা, ভাঙচুর, বিস্ফোরণ

কোম্পানীগঞ্জে একটি পোলট্রি ফিড কোম্পানির কারখানার কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের চিত্র। রোববার রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার গোয়ালের পোল এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পোলট্রি ফিড কোম্পানির কারখানার কার্যালয়ের একটি কক্ষে হামলা, ভাঙচুর ও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে ‘হেলমেট’ বাহিনী। গতকাল রোববার রাত পৌনে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার গোয়ালের পোল এলাকায় এ কে পোলট্রি ফিড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার পরিচালক, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে ৩০ থেকে ৪০টি মোটরসাইকেলে করে কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত ‘হেলমেট’ বাহিনীর সদস্যরা বসুরহাট-কবিরহাট-সোনাপুর সড়কের পাশের এ কে পোলট্রি ফিড কারখানার সামনে আসেন। তখন কারখানার ফটকে থাকা নিরাপত্তারক্ষী ভয়ে ভেতরের দিকে চলে যান। এরপর হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা কারখানার কার্যালয়ের একটি কক্ষে ঢুকে কোনো কথাবার্তা ছাড়াই হামলা ও ভাঙচুর শুরু করেন। একই সময় তাঁরা বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটান। ভয় ও আতঙ্কে কারখানার পরিচালক ও কর্মচারীরা নিরাপদ স্থানে চলে যান। ভেতরে হামলা ও ভাঙচুর শেষে প্রায় ৪০ মিনিট তাঁরা কারখানার সামনে ও আশপাশে মহড়া দেন। এ সময় কারখানার লোকজন জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পরে রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক কিংবা শনাক্ত করতে পারেনি।

আরও পড়ুন

আজ সকালে কারখানার পরিচালক শরফুদ্দিন ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা আবুল কালাম ২০০০ সালে পোলট্রি ফিড কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক আছে। কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে মুখোশ ও হেলমেট পরা শতাধিক ব্যক্তি মোটরসাইকেল করে তাঁদের কারখানায় হানা দেন। তাঁরা কারখানার অফিস কক্ষে ব্যবহৃত কম্পিউটার, আসবাবপত্রসহ সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। এ সময় তাঁরা অন্তত ১৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। হামলা ও ভাঙচুরে তাঁদের প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

শরফুদ্দিন ফারুক আরও বলেন, ঘটনার সময় তিনি কারখানাতেই ছিলেন। হামলাকারীদের ভাঙচুর করতে দেখে তিনি দৌড়ে ভেতরের দিকে ঢুকে যান। এরপর তিনি থানায় ফোন দেন। প্রথম কেউ ফোন ধরেননি। পরে তিনি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা জানতে চায়, কারা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু হামলাকারীদের সবার মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট থাকায় তিনি কাউকে চিনতে পারেননি। এ ঘটনায় তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জে ‘হেলমেট’ বাহিনীর হামলায় তছনছ হয়েছে একটি কারখানার কার্যালয়। রোববার রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার গোয়ালের পোল এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, কোম্পানীগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ তৎপর উঠছে ‘হেলমেট’ বাহিনী। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার আশ্রয়ে থাকা ‘হেলমেট’ বাহিনীর সদস্যরা কয়েক দিনে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১৪ জন নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন। এসব ঘটনায় প্রাণনাশের ভয়ে কেউ প্রশাসন ও পুলিশের অভিযোগ করছেন না। ফলে এ বিষয়ে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, একটি কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছেন। পুলিশ গিয়ে হামলা-ভাঙচুরের সত্যতা পেয়েছে। তবে কে বা কারা হামলা করেছে তা কারখানার মালিকপক্ষ বলতে পারেনি। এরপরও ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন