‘এখন আমাগো কী হবে, আমাগো দেখব কে’

ছেলের শোকে আহাজারি করছেন মা জাহেদা বেগম। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের বল্লভদী ইউনিয়নের চর বল্লভদী গ্রামে
ছবি: আলীমুজ্জামান

নাইম মোল্লাকে (২৫) হারিয়ে আঝরে কাঁদছেন তাঁর মা জাহেদা বেগম (৪১)। তিনি আহাজারি করছিলেন আর বলছিলেন, ‘ওরে নাইম রে, কোথায় তুই চইল্লা গেলি বাজান। তোরে ক্যান আমি ডিম আনতে পাঠাইলাম। ডিম আনতে গিয়ে তুই আর ফিরে আসলি না ক্যান? এখন আমাগো কী হবে, আমাগো দেখব কে?’ আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের বল্লভদী ইউনিয়নে চর বল্লভদী গ্রামে নিহত নাইম মোল্লার বাড়িতে গিয়ে এমন আহাজারি শোনা যায়।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের নগরকান্দার মোল্লার মোড় এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় নিহত হন নাইম মোল্লা। নিহত নাইম ফরিদপুরের সালথা উপজেলার চর বল্লভদী গ্রামের সায়েদ আলী মোল্লার ছেলে।

স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দরিদ্র পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন নাইম। পড়াশোনা বেশি করতে পারেননি। সংসারের অভাব দূর করতে ২০১৮ সালের শেষের দিকে জীবিকার সন্ধানে যান সৌদি আরবে। দালালের মাধ্যমে যেতে খরচ হয়েছিল পাঁচ লাখ টাকা। এ টাকা ধারদেনা ও জমি বিক্রি করে সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় গত বছর নভেম্বরে পরিবারের পছন্দমতো ভিডিও কলের মাধ্যমে বিয়ে করেন পাশের চণ্ডীবর্দী গ্রামের আবদুল কুদ্দুস মোল্লার মেয়ে হালিমা বেগমকে (২২)। বিয়ের দুই মাস পর তিনি গত জানুয়ারিতে সৌদি আরব থেকে বাড়িতে আসেন। সম্প্রতি ওই দালালের মাধ্যমে আবার সৌদি আরবে নতুন চাকরি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নাইম।

ছেলের শোকে কিছুক্ষণ পরপর মূর্ছা যাচ্ছিলেন বাবা সায়েদ আলী মোল্লা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমি এক হতভাগা বাবা। বাবা হয়ে ছেলের লাশ দাফন করতে হয়েছে।’

সায়েদ আলী মোল্লা একজন কৃষক। বসতভিটা বাদে তাঁর দেড় বিঘা কৃষিজমি আছে। এ জমিতে চাষাবাদ করে কোনোমতে তাঁর সংসার চলে। গতকাল রান্নার সময় মা জাহেদা তাঁকে ডিম আনার জন্য দোকানে পাঠান। তখন দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।