আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে অপহরণের পর হাতুড়িপেটার অভিযোগ ফিরে আসা যুবকের

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবককে এলাকা থেকে অপহরণের পর নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে হাত–পা বেঁধে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

তুলে নেওয়ার প্রায় ৯ ঘণ্টা পর আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ি ফিরেছেন রফিকুল। তিনি উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা। রফিকুল উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া সাংগঠনিক ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রার্থী।

এর আগে আজ সকাল ১০টার দিকে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ‘চনপাড়া মোড়’ (অটোরিকশা স্ট্যান্ড) থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বজলুর রহমান তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে রফিকুল ইসলাম ও দুজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন। অভিযুক্ত বজলুর রহমান কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান।

বেলা একটার দিকে বজলুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অপহরণের বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন। ওই সময় বজলুর রহমান বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন পরিষদে আছি। এমন কিছু করিনি। আমি তাঁকে (রফিকুল) চিনি না। তাঁদের (রফিকুলের পরিবার) বলেন, আমার গাড়ি চেক করতে।’ পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সংবাদকর্মী পরিচয়ে বজলুর রহমানের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রফিকুলের নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে কেটে দেন। সন্ধ্যায়ও তাঁকে কয়েকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ধরেননি।

এদিকে সন্ধ্যা সাতটার দিকে রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে হামলার ভয়ে তিনি গত মাস থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এর মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর বজলুর রহমান সমর্থকদের নিয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা চালান। আজ সকালে মা–বাবার সঙ্গে দেখা করতে রফিকুল এলাকায় এলে বজলুর রহমান তাঁকে দেখে ফেলেন। পরে তাঁকে তুলে চনপাড়া ৩ নম্বর সেক্টরের সেতুবন্ধন ভবনে অবস্থিত বজলুরের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে হাত–পা বেঁধে তাঁকে হাতুড়িপেটা করা হয়।

সন্ধ্যায় তাঁর মা–বাবা–স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা খোঁজ পেয়ে বজলুর রহমানের কার্যালয়ে যান বলে জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই সময় বজলুর রহমান আড়ালে গিয়ে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি গালাগাল করে সেখান থেকে রফিকুলকে চলে যেতে বলেন। পরে বাড়ি না ফিরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন রফিকুল।

আরও পড়ুন

বিষয়টি পুলিশকে জানালে তিনিসহ পরিবারের ওপর নির্যাতন বাড়তে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন রফিকুল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাত–পা বাইন্ধা উনি (বজলুর) হাতুড়ি দিয়া আমার দুই পায়ে মারছে। সকালে এক দফা মাইরধইর করছেন। পরে আমারে অফিসে তালা দিয়া উনি চইলা যান। বিকেলে আবার আসেন। আবার মারধর শুরু করেন। ওই সময় উনি মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।’

এর আগে আজ সকালে রফিকুলকে তুলে নেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে থাকা চনপাড়া এলাকার দুজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে রফিকুল চনপাড়া মোড়ে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন মেম্বার সাহেবের (বজলুর) সাদা রঙের প্রাইভেট কারটা আইসা সেখানে থামেন। তিনি গাড়িতে বসে রফিকুলকে ডাকেন। রফিকুল কাছে গেলে তাঁকে জোর করে গাড়ির ভেতর তুলে নেন। এ সময় মেম্বার সাহেবের সঙ্গে তাঁর তিনজন অস্ত্রধারী বডিগার্ড ছিল। মেম্বার সাহেবের পেছনে একটি লেগুনা ছিল। লেগুনায় চারজন পুলিশের পোশাক পরা লোক ছিলেন।’

মেম্বার সাহেব কে জানতে চাইলে ওই দুইজন বলেন, ‘উনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বজলু ভাই।’ রফিকুলকে গাড়িতে তুলে নেওয়ার সময় বজলুর সাদা রঙের শার্ট পরা ছিলেন বলেও তাঁরা জানান।

রফিককে তুলে নেওয়ার পর থানায় কল করে বিষয়টি জানানো হয়েছিল বলে জানান চনপাড়া সাংগঠনিক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুন মিয়াজি।

অভিযোগ বিষয়ে কথা বলতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) আবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। আপনার মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলাম। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’