‘আমার বুকের মানিককে কীভাবে আমি কবরে রেখে যাব। তোমরা আমার মানিককে এনে দাও। আমি কাকে নিয়ে ছুটির দিনে ঘুরতে যাব? কাকে আমি প্রতিদিন স্কুলে আনতে যাব?’
শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন ইসমাইল হোসেন। গত সোমবার রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় প্রাণ হারায় তাঁর মেয়ে তাসনিম আফরোজ আইমান (১০)। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যায় সে। তার শরীরের ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তাসনিমের মরদেহ আনা হয় শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাড়িতে। লাশবাহী গাড়ি গ্রামে এলে স্বজনদের কান্নার রোল পড়ে যায়। প্রিয় সন্তানের মৃত্যুতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন বাবা ইসমাইল হোসেন ও মা আয়েশা আক্তার। তাঁদের আহাজারিতে চোখ ভিজে উঠছিল আশপাশে থাকা স্বজনদেরও।
তাসনিম মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। ইসমাইল-আয়েশা আক্তার দম্পতির তিন কন্যাসন্তান। তাঁরা থাকেন ঢাকার উত্তরার বাড়িতে। পণ্য আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায়ী ইসমাইল জানান, সোমবার সকালে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে তিনি ব্যবসার কাজে যান।
স্বজনেরা জানান, সোমবার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে তাসনিম ছুটে যায় শিক্ষকদের কাছে। এক শিক্ষকের মুঠোফোন দিয়ে দুর্ঘটনার কথা জানায় দাদি রুমা বেগমকে। খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে যান বাবা ইসমাইল হোসেন ও মা আয়েশা আক্তার। প্রিয় সন্তানকে নিয়ে তাঁরা ছুটে যান রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
তাসনিমের মামা শামীম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল ছুটির পর তাকে স্কুল থেকে বাসায় আনার কথা ছিল মায়ের। মেয়েকে আনতে যাওয়ার আগে তিনি দুপুরের খাবার রান্না করছিলেন। এমন সময় দুর্ঘটনার খবর শুনে স্কুলে ছুটে যান।’
স্বজনেরা জানান, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে তাসনিমের লাশ প্রথমে নেওয়া হয় উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বাসায়। সেখানে দুপুরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ আনা হয় নারায়ণপুর গ্রামের বাড়িতে। সেখানে বাদ এশা দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তাসনিমের নানা নিজামুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর মামার সঙ্গে এ মাসের শুরুর দিকে আমাদের বাড়িতে এসেছিল বেড়াতে। এটাই যে তার শেষ যাত্রা হবে, তা আমরা বুঝতে পারি নাই। সে বায়না ধরেছিল এরপর সে হেলিকপ্টারে চড়ে গ্রামের বাড়িতে আসবে। আমরাও কথা দিয়েছিলাম স্কুল ছুটি হলেই তাকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে গ্রামে নিয়ে আসব। আমার প্রিয় নানাভাই এল ঠিকই, তবে লাশবাহী গাড়িতে নিথর দেহে। কী থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারলাম না! আল্লাহ কেন এমন করল আমাদের সঙ্গে। আমরা ওর মাকে কী জবাব দেব, কী সান্ত্বনা দেব!’