পরিত্যক্ত জায়গায় ফুলবাগান

‘আমার স্কুল, আমার বাগান’ প্রতিপাদ্যে মুন্সিগঞ্জে প্রতিটি বিদ্যালয়ে বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত জায়গায় করা ফুলের বাগান। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী রাধানাথ উচ্চবিদ্যালয়েছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয়ের জায়গাটি ছিল ঝোপঝাড়ে ভরা। পড়ে ছিল পরিত্যক্ত অবস্থায়। জন্মাত মশা-মাছি। শিক্ষার্থীদের যেখানে সপ্তাহে এক দিনও আসা হতো না। সেই জায়গায় এখন বাহারি ফুলের দৃষ্টিনন্দন বাগান। পরিত্যক্ত জায়গাটি এখন শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বাগানের সৌন্দর্য ও ফুলের সুবাসে উৎফুল্ল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এটি মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের চিত্র।

শুধু এই বিদ্যালয় নয়, জেলার আরও ৯টি বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত জায়গা ও বিদ্যালয়ের আঙিনায় এমন বাগান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘আমার স্কুল, আমার বাগান’ প্রতিপাদ্যে বিদ্যালয়ভিত্তিক বাগান তৈরির এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলার সব কটি প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে এমন বাগান তৈরির কাজ।

গতকাল বুধবার সকালে পাইকপাড়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের বাগানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন। এদিন বছিরুননেছা উচ্চবিদ্যালয়, মিরকাদিম হাজী আমজাদ আলী উচ্চবিদ্যালয়, রামপাল এন বি এম উচ্চবিদ্যালয়, বকুলতলা এইচ কে উচ্চবিদ্যালয়, বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়, আড়িয়ল স্বর্ণময়ী উচ্চবিদ্যালয়, ব্রাহ্মণভিটা ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়, আউটশাহী রাধানাথ উচ্চবিদ্যালয়সহ ৯ বিদ্যালয়ের বাগানের উদ্ধোধন করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ৬১০ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১২৭টি উচ্চবিদ্যালয়ে একটি করে দৃষ্টিনন্দন বাগান করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২ শতাংশ জায়গায় এ বাগান করা হবে। বিদ্যালয়ের ক্রীড়া তহবিলের আর্থিক সহযোগিতায় এসব বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব বাগানে সারা বছর ফুল, ঔষধি গাছসহ শাকসবজির চারা লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বিভিন্ন স্কুলে এমন বাগানের উদ্যোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাছপালা ছাড়া আমরা আমাদের পৃথিবী ভাবতে পারি না। অথচ দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি খুব কম। বিশ্বকে সবুজে সাজাতে ছোট থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাছপালার প্রতি ভালোবাসা জাগাতে হবে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে বেশি সময় কাটায়। বিদ্যালয় তাদের সবচেয়ে আনন্দের জায়গা। এখান থেকে তারা জীবন গড়তে শেখে। জেলার প্রতিটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাগান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখান থেকে গাছের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বন্ধন গড়ে উঠবে। তাদের এ বন্ধন সারা জীবন থেকে যাবে।’

উদ্বোধন হওয়া পাইকপাড়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের ছোট্ট বাগানটিতে গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, মোরগ ফুল, জিনিয়া, পানিকা, ক্রিসমাস ট্রি, স্পাইডার, বনসাইসহ দেশি-বিদেশি জাতের কয়েক শ গাছ দেখা যায়। প্রতিটি গাছের পাশে ছোট করে নাম লেখা দেখা গেছে। বাগানে গাছের চারা ও ফুল শিক্ষার্থীরা পরিচর্যা করছিল।

এ সময় বিদ্যালয়টির বিজ্ঞান শাখার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী খাদিজা ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বাগানের জায়গাটা একেবারে পরিত্যক্ত পড়ে ছিল। এখানে খেলার সুবাদে মাঝেমধ্যে আসত তারা। দুই সপ্তাহ আগে বাগানের কাজ শুরু হয়। তখন থেকে স্কুলে এসে অন্তত দু-তিনবার বাগানের ফুল দেখতে আসে সে। আরেক শিক্ষার্থী মো. রায়হান বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে এমন সুন্দর বাগান আগে ছিল না। বাগান পেয়ে আমরা খুশি। বাগানে যেসব ফুলগাছ রয়েছে, সবগুলো চিনতাম না। গাছের পাশে নাম থাকায় নতুন নতুন গাছ চিনতে পারছি।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মল পরিবেশ তৈরিতে বাগান সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন পাইকপাড়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ও তাঁর নির্দেশে আমরা বাগান করেছি। আমাদের বিদ্যালয়ে বাগানে ১৭ প্রজাতির ৫২০টি গাছ রয়েছে। বিদ্যালয়ের বাগান দেখে শুনেছি, শিক্ষার্থীরাও বাড়িতে বাড়িতে বাগান করা শুরু করছে। জেলা প্রশাসকের বাগানের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়।’