সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে তরুণীকে আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণের অভিযোগ

ধর্ষণবিরোধী প্ল্যাকার্ডফাইল ছবি

সিলেটে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে আড়াই মাস ধরে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও নগরের লালদীঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম (৪০); একই এলাকার আবদুল মনাফ (৩৮) এবং রেখা বেগম (৩০) নামের এক নারী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগ দাখিলের পরপরই সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

মামলায় সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী তরুণী নগরের শেখঘাটের একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং শহরের একটি এলাকায় বসবাস করতেন। অভিযুক্ত রেখা বেগম তাঁর প্রতিবেশী। ভুক্তভোগীকে শহরের বাসায় রেখে গ্রামে বেড়াতে যান স্বজনেরা। এ সময় ওই তরুণীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রেখা। ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘সালাম নেতা টাইপের লোক, বিপদে-আপদে উপকারে আসবে।’ গত ৭ জানুয়ারি রেখার মাধ্যমে তরুণীকে নিজের বাসায় নিয়ে যান সালাম। এরপর টানা ২২ দিন সালাম তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।

এজাহারে বলা হয়, এর মধ্যে ওই তরুণীর মা-বাবা গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসেন। বাসায় মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যেতে চাইলে প্রতিবেশী রেখা বেগম তাঁদের সালামের কাছে নিয়ে যান। সালাম তাঁদের জিডি করতে নিষেধ করে নিজেই খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এর দু-তিন দিন পর তরুণীর মা-বাবা আবার সালামের কাছে গেলে তিনি বিকেলের দিকে ফিরিয়ে আনার কথা জানান।

ওই দিন বিকেলে তরুণীকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সালাম জানান, তরুণী এক প্রবাসীর বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই উদ্ধার করেছেন। স্বজনেরা প্রবাসীর নাম জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে তরুণী মা-বাবাকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি জানালে সালাম তাঁদের হত্যার হুমকি দেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার তিন দিন পর আবার কাজে যাচ্ছিলেন তরুণী। তখন সালাম বিয়ে ও ভালো জায়গায় কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। কথামতো সালামের সঙ্গে আবার দেখা করেন ওই তরুণী। তিনি তরুণীকে কিছু টাকা দিয়ে নগরের কাজীরবাজার এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় পাঠান। সেখান থেকে অভিযুক্ত মনাফ তাঁকে হবিগঞ্জের বাহুবলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান।

সেখানে আটকে রেখে সালাম-মনাফসহ একাধিক ব্যক্তি তাঁকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী কৌশলে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিলেটে পালিয়ে আসেন। স্বজনেরা তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে তরুণীর মা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

মেয়ে অসুস্থ ও স্ত্রী কাজে যাওয়ায় এ ব্যাপারে এখনই কথা বলতে রাজি হননি ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা। তাঁর স্ত্রী পরে বিস্তারিত বলবেন বলে জানালেন। অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আবদুস সালাম মামলার পর থেকে পলাতক। অভিযোগের বিষয়ে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। আবদুস সালাম ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।