রেজিস্ট্রারের অপসারণ দাবিতে তালা ও কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনায় ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জিডি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে অপসারণের দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কক্ষে গতকাল রোববার তালা দেওয়া ও কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনায় আন্দোলনকারী ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ বাদী হয়ে এই জিডি করেন। এতে ১০ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ এবং আরও ১০ থেকে ১২ জন অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীকে বিবাদী করা হয়।

জিডিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিন খান, সাংবাদিকতা বিভাগের নাজমুল ঢালী, লোকপ্রশাসন বিভাগের মোকাব্বেল শেখ, আইন বিভাগের তরিক হোসেন, ইংরেজি বিভাগের মিজানুর রহমান, এনামুল হক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এমডি শিহাব, ইংরেজি বিভাগের তরিকুল ইসলাম, কোস্টাল স্টাডিজ বিভাগের স্বপ্নীল অপূর্ব রকি ও রসায়ন বিভাগের রফিক।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও জিডির ৭ নম্বর অভিযুক্ত এমডি শিহাব বলেন, ‘যৌক্তিক আন্দোলন দমন করতে ও শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখাতে জিডি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সোনিয়া খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। তবে আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’

রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে উপাচার্যের নির্দেশে অপসারণের চিঠিতে আমার স্বাক্ষর ছিল। এরপর অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীন উচ্চ আদালতে এই অপসারণ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। রিটটি আদালত গ্রহণ করেননি। এরপর কতিপয় শিক্ষার্থীকে উসকিয়ে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব আন্দোলন করানো হচ্ছে। কিন্তু আমি তো উপাচার্যের নির্দেশে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছি। এ জন্য আমার অপসারণ চাওয়া কতটা যৌক্তিক?’

রোববার রেজিস্ট্রারের অপসারণের দাবিতে কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দিয়েছিলেন একদল শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের দাবি, রেজিস্ট্রার ফ্যাসিস্টদের দোসর ও ভোলার মনপুরা উপজেলার আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মুহসিন উদ্দীনকে ১৩ এপ্রিল সিন্ডিকেট সদস্য ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই অধ্যাপক মুহসিনকে স্বপদে বহাল করার দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন একদল শিক্ষার্থী। আন্দোলনকারীরা চার দফা দাবি দিয়ে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে আওয়ামী দোসর আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেন উপাচার্য। এমন অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন চালিয়ে আসছি। কিন্তু উপাচার্য আন্দোলন দমাতে আগে একটি মামলা করান। এবার রেজিস্ট্রারকে অপসারণের দাবি ওঠায় শিক্ষার্থীদের নামে জিডি করা হয়েছে।’

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিবাদীগণ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র। তাঁরা বিভিন্নভাবে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে আসছেন। বিবাদীগণ দলবলে চলেন, বিধায় তাঁদের ভয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তটস্থ থাকেন।’ জিডিতে আরও বলা হয়, ‘বিবাদীগণ তাঁদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্নভাবে বাধার সৃষ্টি করছেন। রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তাঁদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া ও ফেস্টুন নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে বিবাদীগণ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কার্যালয় প্রশাসনিক ভবন-২ এর তৃতীয় তলায় গিয়ে হ্যান্ডমাইক সহকারে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করার জন্য রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দেন। পরে তাঁরা রেজিস্ট্রারের কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষে ও কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ করে রাখেন।’

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে আপাতত ১০ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে জিডি করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’