সরু রাস্তায় ইজিবাইকের জট

লাইসেন্সধারী ইজিবাইক রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরও প্রায় আট হাজার। 

নওগাঁ শহরে দুর্বিষহ যানজটে স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল বিকেলে শহরের প্রধান সড়কের ব্রিজের মোড় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যানবাহন বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকা ও সরু রাস্তার কারণে নওগাঁ শহরে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে শহরবাসী। 

নওগাঁ শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশে তাজের মোড়, বাটার মোড়, ব্রিজের মোড়, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, মুক্তির মোড়, রুবির মোড় ও দয়ালের মোড় এলাকায় গড়ে উঠেছে বড় বড় বিপণিবিতান, ব্যাংক, বিমাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। শহরের এসব এলাকার ভেতর দিয়ে চলে গেছে প্রধান সড়ক। সড়কটির প্রস্থ কোথাও ১৬ ফুট, আবার কোথাও ৮ ফুট। এ সড়ক দিয়ে রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, অটোরিকশাসহ ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া সড়কে কিছুদূর পরপর গড়ে উঠেছে ইজিবাইক ও অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। ফলে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। শহরের প্রধান সড়ক ছাড়াও শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড-গোস্তহাটির মোড় সড়ক, ব্রিজের মোড়-ডিগ্রির মোড় সড়কেও তীব্র যানজট লেগে থাকে। 

ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইজিবাইক শহরের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
নজমুল হক, মেয়র, নওগাঁ পৌরসভা 

নওগাঁ পৌরসভার হিসাবমতে, শহরের আয়তন ৩৮ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার। ২০১০ সাল থেকে শহরে চলাচলে ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালের পর থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ছোট এই শহরে পৌরসভার লাইসেন্সধারী ইজিবাইক রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। এর বাইরে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক আছে আরও প্রায় আট হাজার। এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ গাড়ি রয়েছে আরও প্রায় আট হাজার।

শহরের ব্রিজের মোড় এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী নাসির আহমেদ বলেন, ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলো যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সড়কের মোড়গুলোতে গোলচত্বর বা ইউটার্ন না থাকায় যেখানে-সেখানে সড়কের ওপর ইজিবাইকগুলো ইচ্ছেমতো ঘোরানো হচ্ছে। সিগন্যাল ছাড়াই হঠাৎ করে রাস্তায় গাড়ি ঘোরানোর ফলে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের সঙ্গে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। ইজিবাইকচালকদের এসব নিয়ন্ত্রণহীন চলাফেরা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মারামারির ঘটনাও ঘটে।

এদিকে চালকদের দাবি, শহরের ভেতরে ইজিবাইকের কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। বৈধ স্ট্যান্ড বা ফাঁকা কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁদের রাস্তার ওপরেই ইজিবাইকগুলো দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। এ ছাড়া বৈধ ইজিবাইকের বাইরেও শহরে অবৈধভাবে কিছু ইজিবাইক চলাচল করে।

মিজানুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম নামের দুজন ইজিবাইকচালক বলেন, পৌরসভা থেকে যে সংখ্যক ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তার প্রায় দ্বিগুণ ইজিবাইক অবৈধভাবে শহরে চলাচল করে। অবৈধ ইজিবাইকের চলাচল বন্ধ করা হলে যানজট যাবে। 

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে শহরের রাস্তাঘাট সংস্কার ও যানজট নিরসনে জনপ্রতিনিধি, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নওগাঁ জেলা সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। 

টানা ১২ বছর নওগাঁ পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপির নেতা নজমুল হক। তিনি বলেন, ইজিবাইক ও অটোরিকশার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলেই চালকেরা আন্দোলন করেন। শহরে ইজিবাইকের চাপ কমানোর জন্য ২০১৭ সাল থেকে শহর এলাকায় ইজিবাইকের রুট পারমিটের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরও আশপাশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লাইসেন্স পাওয়া ইজিবাইক শহরের ভেতরে ঢুকে পড়ে।