উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে ভোট গ্রহণ, ইভিএমে ধীরগতি

পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিতে আসা নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সাতখামার ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

উৎসবমুখর পরিবেশে পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভার ভোট গ্রহণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ইভিএমে ভোট গ্রহণে নারী ভোটারদের ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। ভোটকেন্দ্রগুলোয় পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে দুপুর পর্যন্ত কোনো কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বলছেন, সকাল থেকে নারী ও পুরুষ ভোটাররা প্রায় সমানতালে ভোট দিলেও পুরুষদের তুলনামূলক কম সময় লাগছে। নারী ভোটারদের ইভিএমের পদ্ধতি বুঝতে ও আঙুলের ছাপ মেলাতে কিছুটা সময় লাগায় তাঁদের সারি দীর্ঘ হচ্ছে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌরসভার ভাসাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ওই কেন্দ্রে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন নারী ভোটাররা। অন্যদিকে, স্বল্পসংখ্যক পুরুষ ভোটার বুথের সামনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার ১ হাজার ৭৬২। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৬০টি। এর মধ্যে নারীদের ভোট ১৭৩টি এবং পুরুষের ১৮৭টি।

বেলা ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত বোদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোট ৪৬৪টি ভোট পড়েছে। এর মধ্যে ২৩৪ জন নারী ও ২৩০ জন পুরুষ ভোট দিয়েছেন। এ কেন্দ্রের মোট ভোটার ১ হাজার ৭২৭। দুপুর ১২টায় সাতখামার ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছিল ৫৩৪টি। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২৪৮ জন নারী এবং ২৮৬ জন পুরুষ। কেন্দ্রের মোট ভোটার ১ হাজার ৬৩৭। দুপুর ১২টায় কেন্দ্রটিতে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

ভাসাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা আনোয়ারা বেগম (৪৫) বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে এখনো লাইনের মাঝখানে পড়ে আছি। লাইনের সামনের ভোটার কমেই না। অথচ আমাদের পরে ভোট দিতে এসে অনেক পুরুষ ভোট দিয়ে চলে গেছেন।’

বোদা পৌর নির্বাচনে ইভিএমে পুরুষ ভোটারদের চেয়ে নারী ভোটারদের ভোট গ্রহণে তুলনামূলক বেশি সময় লাগছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভাসাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

সাতখামার ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা পলি রানী (২৮) বলেন, ‘নারীরা ভোট দিতে একবার ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে চায় না। অনেকে বুঝতে পারে না, এ জন্য আমাদের লাইন বড় হয়ে আছে।’

বোদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকেই নারী ও পুরুষ ভোটাররা সমানভাবেই ভোট দিচ্ছেন। তবে পুরুষদের চেয়ে নারীদের ভোট নিতে একটু বেশি সময় লাগছে। অনেক নারী ভোটারকে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে। অনেকের আবার আঙুলের ছাপ নিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তবে সবাই ভোট দিতে পারছেন।

সাতখামার ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নারীরা কিছুটা বেশি এসেছেন। তবে দুপুরের দিকে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। পুরুষদের সময় কম লাগায় তাঁরা ভোট দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চলে যাচ্ছেন। এ জন্য তাঁদের সারি দেখা যাচ্ছে না। নারীরা ভোট দিতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় নিচ্ছেন।

বোদা পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রের মোট ৪৮টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভায় মোট ভোটার ১৪ হাজার ৫১২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৫১ ও নারী ভোটার ৭ হাজার ৪৬১।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলমগীর বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, তিন প্লাটুন বিজিবি, র‍্যাবের তিনটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের তিনটি ভ্রাম্যমাণ দল, তিনটি স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ প্রতিটি কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও আনসারের ১৬ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

২০০১ সালে ১৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বোদা পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর পৌরসভায় প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।