লাল পিঁপড়ের ডিম বেচে চলে তাঁদের সংসার

পিঁপড়ের ডিম খুঁজতে বের হয়েছেন বেল্লাল হোসেন। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা গোমতী এলাকা থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা-গোমতি গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে ঘন গাছগাছালি। গোমতি বাজারের কাছে ওই এলাকায় একটা লম্বা বাঁশ ও বাঁশের ঝুড়ি হাতে এক যুবককে দেখা গেল, গাছে গাছে কী যেন খুঁজে ফিরছিলেন। কাছে গিয়ে জানা গেল তিনি লাল পিঁপড়ার বাসা খুঁজে সেই বাসা থেকে পিঁপড়ের ডিম সংগ্রহ করেন।

গোমতি এলাকায় পিঁপড়ের ডিম খুঁজে বেড়ানো ওই যুবকের নাম বেল্লাল হোসেন (৩৫)। খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বড়ঢলু এলাকার বাসিন্দা তিনি। তাঁর মতো মানিকছড়ি এবং গুইমারা উপজেলায় আরও ১০-১২ জন এই কাজের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা লাল পিঁপড়ার ডিম প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এ দিয়েই চলে তাঁদের সংসার।  

বেল্লাল হোসেন বলেন, ১১ বছর ধরে তিনি এই কাজের সঙ্গে জড়িত। ডিম সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট। পিঁপড়েগুলো সাধারণত মগডালে বাসা বাঁধে। ডিম সংগ্রহ করার সময় কমবেশি কামড় খেতে হয়। সারা দিন বনে জঙ্গলে ডিমের আশায় ঘুরে বেড়ান তিনি। পিঁপড়ের বাসা পাওয়ার ওপর নির্ভর করে তাঁর আয়। কোনো দিন দুই কেজি কোনো দিন এক শ গ্রাম ডিম সংগ্রহ করতে পারেন তিনি। দুই দিন পরপর চট্টগ্রাম থেকে এক ব্যবসায়ী এসে তাঁদের কাছ থেকে ডিম কিনে নিয়ে যান। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই সাত মাস পর্যন্ত তিনি পিঁপড়ের ডিম সংগ্রহ করেন। এরপর বাকি পাঁচ মাস করেন দিনমজুরি। এ আয় দিয়েই চলে তার ছয়জনের সংসার।

আরেক ডিম সংগ্রহকারী দুলাল মিয়া বলেন, সব পিঁপড়ের ডিম পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রয়োজন লাল পিঁপড়ের বাসা। লাল পিঁপড়ের বাসায় মিলে প্রচুর সাদা ডিম। এই পিঁপড়ের ডিমই যে তাঁর জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ার। সাধারণত মেহগনি, আম, লিচু, কনক, কড়াইসহ দেশীয় গাছগুলোতে লাল পিঁপড়ের বাসা পাওয়া যায়। বড় বাসা ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে। ডিমগুলো মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডিম আস্ত না থাকলে মাছ খায় না।

এই পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলেন, এক সময় প্রচুর ডিম পাওয়া যেত। তখন এই পেশায় ৩০ থেকে ৪০ জন জড়িত ছিল। নির্বিচারে দেশীয় গাছ কাটা এবং বিদেশি গাছ লাগানোর কারণে পিঁপড়ের বাসা কমে গেছে। তাই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে।

চট্টগ্রাম থেকে পিঁপড়ের ডিম কিনতে আসা ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, ২২ বছর ধরে তিনি মানিকছড়ি থেকে পিঁপড়ার ডিম কিনে নিয়ে চট্টগ্রামে বিক্রি করেন। মূলত মাছের খামারি ও জেলেরা এই ডিম কিনে থাকেন। চট্টগ্রামে লাল পিঁপড়ের ডিমের চাহিদা প্রচুর।