গলাচিপায় মাটি খুঁড়ে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য হস্তান্তর
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দি ইউনিয়নের কিংবদন্তির কালারাজা গ্রাম থেকে মাটি খুঁড়ে পাওয়া বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে গলাচিপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল প্রত্নসম্পদগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করেন।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে আছে রাজ-রাজাদের ব্যবহার করা কাঠের তৈরি অভিজাত লাঠি ও বেলচা-জাতীয় বস্তু, পোড়ামাটির তৈরি বেশ কয়েকটি প্রদীপদানি, অজানা প্রাণীর হাড়গোড় ইত্যাদি।
ওই ইউনিয়নের কালারাজা গ্রামের রাজাবাড়ির আবদুল মান্নান মৃধা মাটি খুঁড়ে এসব নিদর্শন সংগ্রহ করেছেন। আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৫ সালে ঐতিহাসিক কালারাজার বিল নামের একটি স্থানে পুকুর খননের সময় আকস্মিকভাবে মাটির প্রায় ৯ ফুট নিচ থেকে বেশ কয়েকটি পুরোনো বস্তু বেরিয়ে আসে। পরে তিনি এসব বস্তুর প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করেন। তবে এসব নিদর্শন কীভাবে, কোন সংস্থার কাছে হস্তান্তর করবেন, সেটা জানতেন না।
২০১৯ সালের এপ্রিলে গলাচিপা উপজেলায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রমের সময় তিনি এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের বিষয়ে জরিপ দলের সদস্যদের জানান। পরে জরিপ দলের সদস্যরা বস্তুগুলো তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে সেগুলো হস্তান্তরেরর অনুরোধ করেন। কিন্তু এরপরই করোনার মহামারির শুরু হওয়ায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হতে থাকে।
অবশেষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খানের স্বাক্ষরিত এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আজ দুপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ইউএনও মহিউদ্দিন আল হেলাল প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌসের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের কাছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো বুঝিয়ে দেন।
গোলাম ফেরদৌস বলেন, কালারাজা স্থানটি দক্ষিণাঞ্চলের ইতিহাসে সুপরিচিত একটি নাম। তবে পর্যাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অভাবে এত দিন এই স্থানের গুরুত্ব প্রমাণিত হয়নি। বিগত কয়েক বছরে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো এই অঞ্চলের প্রাচীন জনবসতির প্রচলিত ধারণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং ইতিহাস পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। ভবিষ্যতে এখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরীক্ষামূলক খনন ও অনুসন্ধানের পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি।
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দি ইউনিয়নের একটি গ্রাম কালারাজা। বর্তমান বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, কোটালীপাড়া ও বাগেরহাটের পূর্বাংশ নিয়ে গঠিত ছিল প্রাচীন বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য। বাকলা চন্দ্রদ্বীপের রাজা ছিলেন জয়দেব। জয়দেব মারা যাওয়ার পর সিংহাসনে বসেন তাঁর মেয়ে কমলা সুন্দরী। কমলার¯স্বামীর নাম ছিল বলভদ্র বসু। কথিত আছে, বলভদ্র বসু প্রজাদের কাছে ‘কালারাজা’ নামে পরিচিত ছিলেন। গলাচিপার কালারাজার বিল তাঁর নামেই হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।