নিজেদের কারখানার আসবাব বিক্রি করেই কোটি টাকা আয় কাপ্তাই বিএফআইডিসির

কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি কাপ্তাইয়ের বিএফআইডিসির ল্যাম্বার প্রসেসিং সেন্টারেপ্রথম আলো

নিজেদের কারখানায় তৈরি করা আসবাব সরবরাহ করেই ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ কোটি টাকা আয় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) ল্যাম্বার প্রসেসিং সেন্টার (এলপিসি)। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ খরচ বাদ দিয়েও এ অর্থবছরে ২ কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বিএফআইডিসিতে একসময় গভীর বন থেকে সংগ্রহ করা গাছ দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি, সেতুর পাটাতন, রেলের স্লিপারসহ নানা ধরনের সরঞ্জাম বানানো হতো। এসবের চাহিদা থাকায় আশির দশকেও অর্ধশত হাতি দিয়ে গভীর বন থেকে গাছ আহরণ করত প্রতিষ্ঠানটি।

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের(বিএফআইডিসি) ল্যাম্বার প্রসেসিং সেন্টারে তৈরি আসবাব সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি বিএফআইডিসিতে
প্রথম আলো

তবে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির এসব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০১০ সালে আসবাব তৈরির উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। বিএফআইডিসির এলপিসি ইউনিটের মাধ্যমে আসবাব তৈরির এই কার্যক্রম শুরুতে ধুঁকে ধুঁকে চললেও গত দুই অর্থবছরে লাভের মুখ দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মতো ২০২১-২২ অর্থবছরেও প্রতিষ্ঠানটির লাভ ২ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় ১৯৫৯ সালে বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন প্রতিষ্ঠা হয়। স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন নামে। শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির ১০০ একর জায়গা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৬৯ একরের কিছুটা বেশি।

বন থেকে গাছ আহরণ, কেনাকাটাসহ চারটি ইউনিটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। এর মধ্যে বর্তমানে কেবল এলপিসি ইউনিট সচল রয়েছে। আগে এই ইউনিটে বৈদ্যুতিক খুঁটি, রেলের স্লিপারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি হলেও বর্তমানে কেবল আসবাব বানানো হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চাহিদামোতাবেক এসব আসবাব সরবরাহ করা হয়।

কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি কাপ্তাইয়ের বিএফআইডিসির ল্যাম্বার প্রসেসিং সেন্টারে
প্রথম আলো

বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনে বর্তমানে কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন ৭৪ জন। এর মধ্যে ৬০ জন দৈনিক ভিত্তিতে কর্মরত।

সম্প্রতি সরেজমিনে বিএফআইডিসিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বাগান ও বন বিভাগের জব্দ করা গাছ নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। শ্রমিকেরা সেখান থেকে গাছ নিয়ে চিড়াই করে প্রক্রিয়াজাত করছেন। কারখানায় শ্রমিকেরা ব্যস্ত রয়েছেন নানা ধরনের আসবাব নির্মাণে। নির্মাণ করা আসবাবে ফুল আঁকা, রং লাগানোসহ সাজসজ্জার কাজও করছেন কেউ কেউ।

কারখানায় কথা হয় গোলাম হোসেন ও মো. সেলিম নামের দুই শ্রমিকের সঙ্গে। গোলাম হোসেন বলেন, বিএফআইডিসির কারখানায় আসবাব তৈরি করার আগে কাঠের গুণাগুণ যাচাই করা হয়। কাঠ যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাত করায় এখানে তৈরি করা আসবাব অনেক বেশি টেকসই হয়।

কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি কাপ্তাইয়ের বিএফআইডিসির ল্যাম্বার প্রসেসিং সেন্টারে
প্রথম আলো

মো. সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মাসে ১৩ থেকে ১৮ হাজার টাকা মজুরি পান। শ্রমিকেরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে কারখানার বিভিন্ন কাজ করেন।

বিএফআইডিসির কাপ্তাইয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক তীর্থজিৎ রায় প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে কারখানায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেঞ্চ, টেবিল, চেয়ার, আলমারিসহ নানা ধরনের আসবাব তৈরি হচ্ছে। তাঁদের তৈরি করা আসবাব অনেক টেকসই, তাই দেশে এসব আসবাবের ভালো চাহিদা রয়েছে। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের দিকে যদি নজর বাড়ানো যায়, তবে আয় আরও অনেক বাড়ানো সম্ভব।