রূপগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি, লুটপাট

হামলার সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়। শুক্রবার দুপুরে তারাব বাজার এলাকা থেকে তোলাছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকটি দোকানপাট এবং বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত আটটি শটগানের ফাঁকা গুলি চালিয়েছে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার তারাব পৌরসভার তারাব বাজার এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হৃদয় খান (২৫) নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। হতাহতদের মধ্যে কোহিনুর বেগম ও বাদল মিয়া নামের দুজনের নাম জানা গেছে। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। সংঘর্ষ, হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম তাঁরা শনাক্ত করতে পেরেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হবে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তারাব বাজার এলাকার দুটি ‘কিশোর গ্যাং’ চক্র ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারাব উত্তর পাড়া এলাকার বকুল ভূঁইয়ার ছেলে শিমুল ভূঁইয়া একটি পক্ষের এবং স্থানীয় রুবেল মিয়া, শ্রাবণ ওরফে কুত্তা শ্রাবণ ও আকবর বাদশা অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জেরে গতকাল বিকেলে শিমুল ভূঁইয়াকে মারধর করেন রুবেল, শ্রাবণ ও আকবর বাদশা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, রাতে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের এনে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এ সময় উভয় পক্ষ রামদা, চাপাতি, পিস্তলসহ নানা ধরনের দেশি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, গুলি ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সন্ত্রাসীরা তারাব বাজারে টায়ারে জ্বালিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। একপর্যায়ে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় লোকজন তারাব বাজার ছেড়ে চলে গেলে অন্তত আটটি দোকান ভাঙচুর করে লুটপাট চালায় সন্ত্রাসীরা। এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা কবির ভূঁইয়া, তোফাজ্জল হোসেন, তামিম মিয়া, হাশেম ভূঁইয়া, শামিম প্রধান, সুরুজ প্রধান, তাবেল, হাবু ভূঁইয়ার বসতঘরে হামলা, ভাঙচুর চালিয়ে লুটপাট করা হয়। তাণ্ডবের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা তারাব বাজারে ‘সাপ্তাহিক রূপকণ্ঠ’ পত্রিকা কার্যালয়ের দরজা-জানালার কাচ ভাঙচুর করে। প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ও অপরাধীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ওসি দীপক চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা থানা-পুলিশের কয়েকটি দল ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি, উভয় গ্রুপের সদস্যরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ তাণ্ডব চালাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা শটগানের আটটি রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করি। এ সময় উভয় পক্ষের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে দুই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’