বান্দরবানে ৭২ লাখ টাকার আরটিপিসিআর যন্ত্র আড়াই বছর ধরে বাক্সবন্দী

বান্দরবান সদর হাসপাতাল
ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানে ম্যালেরিয়া ও করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ দেওয়া ৭২ লাখ টাকার একটি আরটিপিসিআর যন্ত্র (রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন টেস্ট) আড়াই বছর ধরে বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে রয়েছে। যন্ত্রটি স্থাপন করতে পরীক্ষাগার (ল্যাব) ও পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল নেই। এ জন্য এটি চালু করা যাচ্ছে না। বিষয়টি সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে বলে সিভিল সার্জন দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কোভিড-১৯–এর অতিমারির সময়ে মূলত করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আরটিপিসিআর যন্ত্রটি বান্দরবান সদর হাসপাতালে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাদ্দপত্র অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৫ জুলাই বরাদ্দ দেওয়া যন্ত্রটি শুধু করোনাভাইরাস নয়, ম্যালেরিয়ার নির্ভুল পরীক্ষার জন্যও ব্যবহার করা যাবে।

এ জন্য জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির (এনএমইপি) আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দেওয়া যন্ত্রটি চালু করতে না পারায় কোনো কাজে লাগেনি। কখন চালু করা সম্ভব হবে, তা–ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানাতে পারেননি।

জেলা সদর হাসপাতালের সামনে ছোট আকারের একটি দ্বিতল ভবনে বিশাল আরটিপিসিআর যন্ত্রটি রাখা হয়েছে। এটি স্থাপনের জন্য বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত তিনটি ‘বায়োসেফ’ কক্ষ, আসবাবপত্রসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। পরীক্ষাগার পরিচালনায় ৩ জন কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, ৬ জন ল্যাব টেকনিশিয়ানসহ ২১ জনের প্রশিক্ষিত জনবল দরকার। বান্দরবান সদর হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরটিপিসিআর যন্ত্র স্থাপনের জায়গা পাওয়া যাবে না বলে জানান বিভাগের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা থোয়াই অং চিং মারমা।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস না থাকলেও ম্যালেরিয়ার উচ্চ ঝুঁকির জেলা হিসেবে শনাক্ত বান্দরবানে আরটিপিসিআর ল্যাব চালু করা জরুরি। কিট দিয়ে পরীক্ষা করলে অনেক সময় ম্যালেরিয়া শনাক্ত করা যায় না। আবার শনাক্ত করা গেলেও কোন ধরনের ম্যালেরিয়া, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। আরটিপিসিআর যন্ত্রে পরীক্ষা করে ম্যালেরিয়ার ধরন জানা সম্ভব হলে চিকিৎসা করাও সহজ।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির (এনএমইপি) আওতায় বান্দরবানসহ দেশের ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকাগুলোয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এনএমইপির সার্ভেল্যান্স মেডিকেল অফিসার শাহরিয়ার তানভির আহমেদ বলেছেন, আরটিপিসিআর যন্ত্র ও পরীক্ষাগার স্থাপন এবং জনবলের জন্য মন্ত্রণালয়ে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। কখন আরটিপিসিআর চালু করা সম্ভব হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

সিভিল সার্জন (সিএস) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বান্দরবানে সফরে এসেছিলেন। তাঁকে আরটিপিসিআরের ব্যাপারে অবহিত করে দ্রুত চালুর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি জনবল প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর আশ্বাসের পরও লিখিতভাবে তাগিদপত্র পাঠানো হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ম্যালেরিয়া পরীক্ষার জন্য আরটিপিসিআর ল্যাব গুরুত্বপূর্ণ।