লাশের কোমরে পাওয়া চাবি দিয়ে খুলল ঘরের তালা, ছেলে নিশ্চিত হলেন নিহত নারী তাঁর মা
লাশ পুড়িয়ে বিকৃত করা হয়েছিল। এমনকি হাতের আঙুলও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না পাওয়া যায়। লাশও পচেগলে গিয়েছিল। তবে কোমরে ছিল একগোছা চাবি। সেই চাবি দিয়ে ঘরের তালা খোলার পর ছেলে নিশ্চিত হন, নিহত নারী তাঁর মা।
নিহত নারী (৪৩) রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটার একটি খাবার হোটেলের কর্মচারী ছিলেন। ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। গত শনিবার রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের একটি ধানখেত থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন তারা মিয়া (৩৩), ফারুক হোসেন (৩০) ও হেলাল উদ্দিন (২৩)। তারা মিয়া পবার বাগসারা গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে, ফারুক মহানন্দাখালীর ইছুল মণ্ডলের ছেলে ও হেলাল একই এলাকার এন্তাজ আলীর ছেলে। তারা মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার রাতে রাজশাহী মহানগর পুলিশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানায়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের শাহ মখদুম জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পবা থানা–পুলিশ ও ডিবি পুলিশের তৎপরতায় হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শারিফুর রায়হান প্রথমে আসামিদের শনাক্ত করেন। পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রোববার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে নগরের সোনাদিঘির মোড় থেকে প্রথমে তারা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পরে মহানন্দাখালী এলাকা থেকে ফারুক হোসেন ও পিল্লাপাড়া এলাকা থেকে হেলাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা মিয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ওই নারী টাকার বিনিময়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। পাঁচ হাজার টাকা বিনিময়ে অসামাজিক কাজের জন্য তাঁর সঙ্গে আসামিদের চুক্তি হয়। পরে টাকা পরিশোধ না করে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেন এবং লাশ ধানখেতে ফেলে দেন।
নিহত নারীর ছেলে (২৫) গত রোববার পবা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এতে এজাহারে উল্লেখ করেন, তাঁর মা ও বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে প্রায় ১৫ বছর আগে। তাঁর মা খাবার হোটেলে কাজ করতেন। দুই বছর আগে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ১৮ অক্টোবর সৎবাবা তাঁকে ফোন করে জানান, তাঁর মায়ের ফোন বন্ধ আছে। পরে তিনি (ছেলে) মায়ের ভাড়া বাসায় গিয়ে ঘর তালাবদ্ধ দেখতে পান। স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানতে পারেন, কয়েক দিন ধরে ঘরটি বন্ধ রয়েছে। পরে খবর পান পবার বাগসারা এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। লাশের কোমরে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলে তিনি নিশ্চিত হন যে লাশটি তাঁর মায়েরই।
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, দুষ্কৃতকারীরা লাশ পুড়িয়ে বিকৃত করেছিলেন। তাঁরা হয়তো ক্রাইম পেট্রলের মতো সিরিয়াল দেখে জেনেছেন, হাতের আঙুল পুড়িয়ে দিলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আর শনাক্ত করা যাবে না। চার দিনে লাশও পচে গিয়েছিল। তাঁর ছেলেকে মায়ের পোশাক দেখানো হয়েছিল। দেখে তিনি বলেছিলেন তাঁর মা এ রকম পোশাকই পরতেন; কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত লাশের কোমরে একটি চাবির গোছা ছিল। তাতে তিনটি চাবি ছিল, যা দিয়ে ওই নারীর ঘরের তালা খোলা সম্ভব হয়েছে।