কুমিল্লায় বন্যার পানি কমলেও দুর্ভোগ কাটেনি

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় বন্যার্ত অনেকে গোমতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। আজ শনিবার সকালেছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ মানিকনগর, উত্তর মানিকনগর, খানেবাড়ি গোবিন্দপুর ও কলাকান্দি, মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর গ্রাম থেকে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও গ্রামবাসীর দুর্ভোগ কাটেনি। আজ শনিবার সকালে সরেজমিনে এমন চিত্র পাওয়া গেল।

দক্ষিণ মানিকনগর গ্রামের বাসিন্দা দিলবর নেছা, সুফিয়া বেগম ও হাওয়া বেগম বলেন, গত শনিবার থেকে আজকের শনিবার পর্যন্ত টানা আট দিন পরনের কাপড় পরে আশ্রয়কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। গত শনিবার বসতবাড়ির উঠানে গলাসমান পানি ছিল। পানি কমে আজ হাঁটুর ওপরে। বসতঘরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, বন্যার পানির স্রোতে সবই নষ্ট হয়ে গেছে। রান্নাঘর, জ্বালানির হতশ্রী অবস্থা। একটানা আট দিন শুকনা খাবার খেয়ে স্থানীয় হারাইকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। বসতবাড়িতে উঠতে আরও সময় লাগবে। স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিলে আপাতত না খেয়েই দিন কাটাতে হবে। টানা আট দিন তাঁরা ভাত খেতে পারেননি। শিশুদের দূর-দূরান্তে স্বজনদের বাড়িতে রেখে এসেছেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক শফিক মোল্লা বলেন, বন্যার প্রবল স্রোতে তাঁর বসতবাড়ি গোমতী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গরুগুলো নিয়ে গোমতী নদীর বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন গরুগুলোই তাঁর শেষ সম্বল।

খানেবাড়ি গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মৎস্যচাষি রেজাউল করিম বলেন, কলাকান্দি ইউনিয়নের চারটি গ্রামের মাছের খামার এবং পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। লাখ লাখ টাকার পুঁজি হারিয়ে মৎস্য খামারিরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

কলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক শহীদ উল্লাহ সরকার বলেন, বন্যার পানির স্রোতে ইউনিয়নের চারটি গ্রামের মাঠে আবাদকৃত লাখ লাখ টাকার ধান বন্যার পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে।

উত্তর মানিকনগর গ্রামের বাসিন্দা পোলট্রি খামারি আবদুল হাই বলেন, ইউনিয়নের চারটি গ্রামের কমপক্ষে ১০টি পোলট্রি খামারের হাজার হাজার মুরগি বন্যার পানিতে মরে গেছে। খামারিরা পুঁজি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।

মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আদুল হাকিম বলেন, বন্যার পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ কাটেনি, বসতবাড়ির উঠানে এখনো কোমরসমান পানি। নলকূপ, শৌচাগার পানিতে ডুবে আছে। বসতঘরের কাঁচা ভিটির মাটি সরে গেছে।