কুমিল্লায় ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের যাবজ্জীবন

নিহত ছাত্রদল নেতা পারভেজ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কালীর বাজার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য পারভেজ হোসেনকে হত্যার ঘটনায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৫ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লার অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক নাসরিন জাহান এ রায় দেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আবু তাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ধনুয়াখোলা গ্রামের বাসিন্দা, কালীর বাজার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সেকান্দর আলী (৬৪), ধনুয়াখোলা গ্রামের মো. শাহীন (৩৯), সৈয়দপুর গ্রামের মো. সাদ্দাম হোসেন (৩২), কমলাপুর গ্রামের বাসিন্দা কালীর বাজার ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম (২১), যশপুর গ্রামের মফিজ ভান্ডারী (৬২), কমলাপুর গ্রামের মো. কাওছার (৩২), একই গ্রামের মো. রিয়াজ ওরফে রিয়াদ (৩৩), মো. কামাল হোসেন (৪২), মনশাসন গ্রামের বিল্লাল (৩৪), হোসেনপুর গ্রামের আবদুল কাদের (৪৪), রায়চৌ গ্রামের মো. ইব্রাহীম খলিল (৪৫) ও মো. মেহেদী হাসান ওরফে রুবেল (৩৫), বুড়িচং উপজেলার নারায়ণসার গ্রামের আনোয়ার (৫০) এবং সৈয়দপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন ওরফে ল্যাংড়া জয়নাল (৪৫)। এর মধ্যে কাওছার, রিয়াজ, বিল্লাল পলাতক। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় সেকান্দরসহ ১১ জন উপস্থিত ছিলেন।

সেকান্দর চেয়ারম্যানের নির্দেশে ও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অপর আসামিরা হাত-পা ভেঙে ও থেঁতলে রক্তাক্ত জখম করে পারভেজের হাঁটু ও কনুইতে ছিদ্র করে হত্যা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কুমিল্লা সদর উপজেলার কালীর বাজার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সেকান্দর আলী
ছবি: সংগৃহীত

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১০ জুন ছাত্রদল নেতা পারভেজ হোসেনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, হাঁটু ও কনুই ছিদ্র করে, কুপিয়ে ও বুকের মধ্যে পা দিয়ে মাড়িয়ে হত্যা করা হয়। ওই দিন বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে পারভেজকে সৈয়দপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ফটকের সামনে ঘেরাও করেন আসামিরা। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেকান্দর চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রথমে মোটরসাইকেলে, পরে মাইক্রোবাসে তুলে কমলাপুর বাজারে কামাল হোসেনের স মিলে নেওয়া হয়। এরপর আসামিরা তাঁকে লোহার রড, হকিস্টিক দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটান। একপর্যায়ে কামাল হোসেনের বড় ভাই সেলিম হোসেন বিষয়টি দেখতে পেয়ে স মিল থেকে আসামিদের বের করে দেন। এরপর আসামিরা পারভেজ হোসেনকে স মিল থেকে বের করে ২০০ গজ অদূরে পূর্ব দিকে মোকশদ আলীর কাঠের বাগানের ভেতর নিয়ে যান। সেকান্দর চেয়ারম্যানের নির্দেশে ও পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অপর আসামিরা হাত-পা ভেঙে ও থেঁতলে রক্তাক্ত জখম করে পারভেজের হাঁটু ও কনুইতে ছিদ্র করে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় ১১ জুন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক ও নাজিরা বাজার পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জনের নামে হত্যা মামলা করেন। সিআইডি ঢাকার উপপরিদর্শক মো. সিরাজ উদ্দিন এ মামলার তদন্ত করেন। ২০২২ সালের ৭ জুন তদন্ত কর্মকর্তা ১৪ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরে এই মামলার অভিযোগ গঠন হয়। এ মামলায় ৩০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আজ আদালত রায় দেন। রায়ের পর আদালতে উপস্থিত ১১ আসামিকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

সৈয়দপুর বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চার বছর আগে আমাদের সামনে থেকে পারভেজ হোসেনকে তুলে নেওয়া হয়। এলাকায় আধিপত্য নিয়ে সেকান্দর আলী চেয়ারম্যান ও তাঁর বাহিনীর সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটান।’

এদিকে এ ঘটনার পর ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কালীর বাজার ইউপির নির্বাচন হয়। এতে সেকান্দর আলী চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পাননি। তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তবে নির্বাচনে সেকান্দরের ভরাডুবি হয়।