ঢাকায় অপহৃত মোটরসাইকেলচালক যেভাবে ময়মনসিংহে উদ্ধার হলেন
রাজধানীর মালিবাগ থেকে ফকিরের পুল যাওয়ার পথে হঠাৎ ভাড়ায় চালানো মোটরসাইকেলের চালক কামরুল হাসানের সামনে একটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়। গাড়িতে স্টিকারে লেখা ছিল ‘প্রেস’। ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল কামরুলকে জোর করে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর মুঠোফোনটি বন্ধ করে মারধর শুরু করে তাঁকে। চাওয়া হয় চার লাখ টাকা মুক্তিপণ, না দিলে মৃত্যুর হুমকি।
ময়মনসিংহ নগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চুরখাই এলাকা থেকে গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে কামরুল হাসানকে উদ্ধার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় অপহরণকারী চক্রের সাত সদস্যকে আটক করা হয়। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহে র্যাব-১৪–এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের অধিনায়ক নয়মুল হাসান।
উদ্ধার হওয়া কামরুল হাসান (৩২) বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ধামাহার শোলাগাড়ী গ্রামের প্রয়াত আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে। তিনি রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় পাঁচ বছর ধরে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ার করে সংসার চালান। গতকাল বেলা তিনটার দিকে ঢাকার মালিবাগ থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হঠাৎ আমার চলন্ত মোটরসাইকেলের সামনে ১০ থেকে ১২ জনের দলটি এসে গাড়ি থামিয়ে কিছু না বলেই জোর করে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে চালক ছাড়া ৬ জন ওঠে। আমাকে গাড়িতে তুলে মুঠোফোনটি নিয়ে সেটি বন্ধ করে দেয়। এরপর চার লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য মারধর করতে থাকে। টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে টাকা দিতে রাজি হলে মুঠোফোনটি চালু করে আমাকে দেওয়া হয়। তারপর নিজের গ্রামের পরিচিত এক ভাইকে ফোন করে নিজে বিপদে পড়ার কথা জানিয়ে চার লাখ টাকা ব্যবস্থা করার কথা বলি। পরে আমার পরিবারের সদস্যরা র্যাবের কাছে জানালে র্যাব টহল বসিয়ে আমাকে উদ্ধার করে।’
কামরুল হাসানকে অপহরণের অভিযোগে আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাহমুদনগর গ্রামের মো. রিফাত হাসান ওরফে মিন্টু (২৯), একই গ্রামের মামুন অর রশিদ (২৪), পাঠানতুলা গ্রামের মো. আশরাফুল ইসলাম (২৯), পশ্চিম দাপুনিয়া গ্রামের মো. আল আমিন (৩৫), তাঁতকুড়া গ্রামের মো. মোতালিব (৩৬), ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানা এলাকার শিকদারকান্দা গ্রামের মো. মিরাজ খাঁ (৫২) ও ঢাকার মালিবাগ রেলগেট এলাকার মো. আমিন কাজী (২২)।
র্যাব জানিয়েছে, যে গাড়িটি দিয়ে কামরুল হাসানকে অপহরণ করা হয়েছে, সেটি জব্দ করেছে তারা। গাড়ি থেকে সংসদ সদস্যদের গাড়িতে ব্যবহার করার মনোগ্রাম, গাজীপুর পুলিশ ও ডিবি, প্রেস ও চ্যানেল-১৬, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আরএএম গার্মেন্ট, বিজিএমইএ লেখা লেমিনেটিং করা কাগজ উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৪–এর অধিনায়ক নয়মুল হাসান বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করে টার্গেট করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করত। সে জন্য কখনো গাড়ির সামনে সংসদ সদস্য লেখা লোগো, কখনো সাংবাদিক, পুলিশ বা অন্য পরিচয় লেখা স্টিকার ব্যবহার করত। বর্তমানে সংসদ না থাকায় প্রেস, পুলিশ ও এনবিআর লেখা স্টিকার ব্যবহার করে অপহরণ করছিল চক্রটি। অপহরণকারী চক্রটিকে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।