২৬ হাজার শিক্ষার্থী এখনো বই পায়নি 

উপজেলার ২০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীরা বই পায়নি। এতে তাদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, বছরের শুরুতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যের বই পাওয়ার কথা। কিন্তু বছরের তিন মাস চলে গেলেও ভোলার সদর উপজেলার ২০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছায়নি। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা বারবার আশ্বাস দিলেও বই আসেনি। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের ওই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা খুলনা বিভাগ থেকে বই সংগ্রহ করে পাঠাবে।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকটি বিদ্যালয়ে সকাল ১০টায় পাঠদানের সময় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। দু-একজন থাকলেও মাঠে খেলছে।

কয়েকজন অভিভাবক জানালেন, বই না দেওয়ায় শিক্ষক ক্লাসে হাজিরা ডেকে চলে যান। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে বাসায় ফিরে আসে। বই না দেওয়ায় তেমন ক্লাস হচ্ছে না। 

ভোলা সদর উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভোলা সদর উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। চুক্তিবদ্ধ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে বই না দেওয়ায় তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সরবরাহ না করায় শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। 

■ চলতি বছর প্রথম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম হয়েছে। নতুন বই কেমন হবে, তা তাঁরা জানেন না। 

■ নতুন বই ছাড়া পাঠদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

সদর উপজেলার ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের প্রথম শ্রেণিতে ইংরেজি-বাংলার ১০ সেট এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৬টি করে ইংরেজি বই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতাধিক। সবার মধ্যে বই বিতরণ করতে না পারলে অভিভাবকদের মধ্যে ঝগড়া লেগে যেতে পারে, তাই অনেক প্রধান শিক্ষক বই বিতরণ করেননি। 

ঘুইংগার হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জীবন গোপাল হাওলাদার বলেন, তাঁদের বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ৩৫ জন এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৬৫ জন শিক্ষার্থী। যে বই দিয়েছে, তাতে অভিভাবকের সঙ্গে ঝগড়া ছাড়া কিছুই হবে না। তাই প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির নতুন কোনো বই গ্রহণ করেননি। 

ভোলার ইলিশা ইউনিয়নের মৌলভীরহাট প্রাথমিক মডেল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রথম শ্রেণিতে ৪০ জন এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৬০ জন শিক্ষার্থী। ৬-৭ জনকে বই দিতে পেরেছেন। অনেক অভিভাবক ক্ষুব্ধ। বই না পাওয়ায় অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষার্থীও উপস্থিত হচ্ছে না। 

প্রধান শিক্ষকেরা জানান, বই না দেওয়ায় বছরের শুরু থেকেই ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। রোজার সময় আরও কমেছে। 

প্রধান শিক্ষকেরা আরও জানান, চলতি বছর প্রথম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম হয়েছে। নতুন বই কেমন হবে, তা তাঁরা জানেন না। নতুন বই ছাড়া পাঠদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শিক্ষকেরা পাঠদান করছেন না, এমন নয়। তাদের নামতা, ইংরেজি বর্ণমালা, শব্দ শেখাচ্ছেন ও লেখাচ্ছেন। কিন্তু বই ছাড়া শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে চাইছে না। যারা প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের অর্ধেকও বিদ্যালয়ে আসছে না। বছরের শুরু থেকে শিশুরা যদি বিদ্যালয়মুখী না হয়, তাহলে তাদের ধরে রাখা কষ্টকর। ঝরে পড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। 

প্রধান শিক্ষকেরা আরও বলেন, নতুন বই পেলেই শিশুদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়ে যায়। বছরের শুরুতে পাওয়াটা উৎসাহের কারণেই শিশু নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায়। বই ছাড়া শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। শিশুরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। 

ভোলা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদারের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ভোলা সদর উপজেলাসহ বাংলাদেশের নির্ধারিত কিছু উপজেলায় বই বিতরণের চুক্তি করেছিল, কী কারণে যেন তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে ভোলা সদর উপজেলায় বই আসেনি। বিতরণও হয়নি। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানোর পর তাঁরা খুলনা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বই সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। রোজার পরই বই বিতরণ হবে।