সরকারি ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নৌকার প্রচারণা চালানোর অভিযোগ, একজনকে অব্যাহতি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনপ্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে সরকারি তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বি এম ফরহাদ হোসেনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার ও আজ শুক্রবার স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের পক্ষে মোহাম্মদ ইমরানুল ইসলাম নামের এক সমর্থক সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে একজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড়ের কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোকাদ্দিস হোসেন, উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের বালিখোলা কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার মোহাম্মদ হোসেন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত ভান্ডার রক্ষক জামাল আহমেদ। তাঁদের মধ্যে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়া মোহাম্মদ মোকাদ্দিস হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদ হোসেন উপজেলার পতইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পেয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বি এম ফরহাদ হোসেন। তাঁর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান (কলার ছড়ি)। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও সংসদীয় এলাকার বিভিন্ন পক্ষকে পাশে পাচ্ছেন একরামুজ্জামান। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তাঁর জন্য মাঠে নেমেছে। তাঁর সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এ অবস্থায় নৌকার প্রার্থী ফরহাদ হোসেনকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত ভান্ডার রক্ষক জামাল আহমেদ নিয়মিত নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সভা, মিছিল ও উঠান বৈঠক করছেন; যা সরকারি চাকরিবিধির পরিপন্থী। তাঁকে নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব না দেওয়াসহ আচরণবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। বুধবারের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোকাদ্দিস নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সভা, মিছিল ও উঠান বৈঠক করছেন। তিনি সাধারণ মানুষকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হুমকি দিচ্ছেন। ভোট সুষ্ঠু হবে না, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোটে বিজয়ী হলেও নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে বলে গুজব ছড়াচ্ছেন। কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডার মোহাম্মদ হোসেনও নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।

ইমরানুল ইসলাম বলেন, চার-পাঁচ দিন আগে উপজেলার চাতলপাড়ের নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী সভা হয়। সভায় নৌকার প্রার্থীর মিছিলে ছিলেন মোকাদ্দিস হোসেন। তিনি ফেসবুকে নৌকার পক্ষে প্রচারণাও চালিয়েছেন। চাতলপাড়ের ওই অনুষ্ঠান মোহাম্মদ হোসেন পরিচালনা করেছেন। আর উপজেলা সদরে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে গাড়িবহরের মিছিলের সামনে মোটরসাইকেল বহরের নেতৃত্বে ছিলেন জামাল হোসেন।

অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ মোকাদ্দিস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাতলপাড়ের কাঁঠালকান্দি গ্রামে এলাকাবাসী একটি সভা করেন। আমার বাবা-চাচাসহ আত্মীয়স্বজনের চাপে আমিও সেই সভায় উপস্থিত ছিলাম। অন্য কোনো প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিইনি।’

ভান্ডার রক্ষক জামাল আহমেদের দাবি, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি কারও পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেননি। তা ছাড়া তিনি নির্বাচনের কোনো দায়িত্বে নেই। মোহাম্মদ হোসেনও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। আমি পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পেয়েছি।’

জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউএনও মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদ মোকাদ্দিসকে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জামাল আহমেদকে কোনো দায়িত্বে রাখা হয়নি। মোহাম্মদ হোসেনের বিষয়টি মনে পড়ছে না। তবে তাঁর নির্বাচনী দায়িত্বের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।