কুমিল্লার কান্দিরপাড়-ধর্মপুর সড়ক ছোট-বড় গর্তে ভরা, দুর্ভোগ

গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করছেন।

কুমিল্লার কান্দিরপাড়-ধর্মপুর সড়কের বিভিন্ন স্থান গর্তে ভরা। গত মঙ্গলবার নগরের অশোকতলা চৌমুহনী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড়-ধর্মপুর সড়কের কোথাও ছোট–বড় গর্ত। কোথাও সড়ক ভাঙাচোরা। কোথাও বৃষ্টির পানি জমে ডোবার সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও গর্তের মধ্যে পানি ও কাদা জমে একাকার। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন গর্তে ইট ও সুরকি দিয়ে জোড়াতালি দেয়। কিন্তু যানবাহনের চাপে এগুলো আর টেকে না। গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করছেন।

এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি ও হাইস্কুল, ফরিদা বিদ্যায়তন, আর আর ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কুমিল্লা আইন কলেজ, রানীরবাজার, রেলস্টেশন, শাসনগাছা বাস টার্মিনাল, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ সড়ক জাগুরজুলি এলাকা পর্যন্ত যাতায়াত করে। এ ছাড়া বিসিক শিল্পনগরী ও খাদ্যগুদামের যানবাহনও এখান দিয়ে চলাচল করে।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার বিকেলে ওই সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের অশোকতলা মোড়ের পশ্চিম পাশে অসংখ্য ছোট–বড় গর্তে ইট ও সুরকি ফেলে জোড়াতালি দেওয়া। ভারুল বাড়ির সামনে এবং জেলা ও দায়রা জজের বাসভবনের উত্তর পাশে সড়কের মধ্যে গর্ত আর গর্ত। সেখানে সড়কের পিচ উঠে গেছে। সড়কের মধ্যে খোয়া উঠে পানি জমে আছে। কর ভবনের সামনে বড় আকারের গর্ত। সাবেক রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয়ের পূর্ব পাশে ৫০টির মতো গর্ত। এসব গর্তে কাদাপানি জমে একাকার অবস্থা। কাত্যায়ানী কালীবাড়ির সামনে গর্ত।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কান্দিরপাড়-ধর্মপুর সড়কের দক্ষিণ পাশে পানি থামার নালা ছিল। সেটি চার বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। ফলে সড়কটি কোনোভাবেই রক্ষা করা যায় না। বৃষ্টি হলে সড়কের পানি উপচে পড়ে নালার ওপর দিয়ে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে।

নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এমজিএসপি প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা নগরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় থেকে ধর্মপুর মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের কাজ হয়। তখন নিয়মানুযায়ী, মেশিন দিয়ে ইট, বালু, সিমেন্ট ও পাথর মিশ্রণ করার কথা ছিল। কিন্তু হাতে তৈরি খোয়া দিয়ে সড়কের কাজ হয়। এতে সড়কের কাজ টেকসই হয়নি। তার ওপর এমনভাবে সড়ক করা হয়, কিন্তু বৃষ্টির পানি সরার কোনো জায়গা রাখা হয়নি। এতে সড়কের মধ্যে সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে। দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন বিটুমিনাস ও পিচ নষ্ট হয়ে যায়।

এ সড়কের পাশেই (কান্দিরপাড় নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার) বাসা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের। তিনি বলেন, ‘ভোগান্তি নিয়ে মানুষ এ সড়ক দিয়ে গন্তব্যে যান।’

এবি স্কুলের স্বত্বাধিকারী আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘গত ২৮ জুলাই সংসদ সদস্যকে নিয়ে কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারে রোগী দেখতে হেঁটে কান্দিরপাড় টাউন হল মাঠ থেকে যাচ্ছিলাম। কিছু দূর হাঁটার পর দেখি সড়কে ও পাশের নালায় পানি জমে আছে।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী জি পি (গৌতম প্রসাদ) চৌধুরী বলেন, শিগগিরই এ সড়কের দরপত্র আহ্বান করা হবে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক বলেন, ‘এ সড়কের অবস্থা নাজুক। আগামী মাসে দরপত্র আহ্বান করা হবে। নগরের সব সড়কই পর্যায়ক্রমে ঠিক করা হবে।’