‘মোখা’র খবরে ঝুপড়িতে পরিবার নিয়ে নির্ঘুম রাত দুদু মিয়ার

স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে নিজের ঝুপড়ি ঘরের সামনে দুদু মিয়া। শনিবার বিকেলে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দেবত্র গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

দুই শিশুসন্তান নিয়ে সুপারিগাছের খুঁটি ও পলিথিনের চালের ঘরে থাকেন দুদু মিয়া ও রেজবি বেগম দম্পতি। ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলে আঘাত হানার খবর শোনার পর গতকাল শুক্রবার থেকে চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে দুদু মিয়ার (৫০)। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দেবত্র গ্রামে বাড়ি তাঁর।

দুদু মিয়ার জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে চট্টগ্রাম ও শ্বশুরবাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলার ঘোলাঘাটা গ্রামে। এক বছর আগে বাবার বাড়িতে এসে একটি ঝুপড়ি তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

দুদু মিয়ার ভাই ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অর্থিক অবস্থাও ভালো না। রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। এ জন্য আমরা ভাইকে ঘর তুলতে সহযোগিতা করতে পারি না।’

উপজেলার দাউখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুদু মিয়া দীর্ঘদিন গ্রামে ছিলেন না। এ জন্য তাঁকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের পাকা ঘর দিতে পারিনি। ভবিষ্যতে বরাদ্দ এলে তাঁকে ঘর দেওয়ার চেষ্টা করব। দুদু মিয়া অসুস্থ থাকার বিষয়টি আমি জানি। পরিবারটিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধ্যমতো ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়।’

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুদু মিয়া স্ত্রী রেজবি বেগমকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকতেন। তাঁর স্ত্রী সেখানে পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। এরপর তাঁরা পরিবার নিয়ে চলে যান বরগুনার বামনা উপজেলার গোলাঘাটায় শ্বশুরবাড়িতে। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর দেড় বছর আগে দুদু মিয়ার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্ব খোয়ান তিনি।

একটু সুস্থ হয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি মঠবাড়িয়ার দেবত্র গ্রামে। সেখানে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এক কাঠা জমিতে ঝুপড়ি তুলে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করছেন। মেয়ে ঊর্মি আক্তার স্থানীয় শহীদ বাচ্চু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ছেলে ইসমাইলের বয়স চার বছর।

শনিবার বিকেলে দুদু মিয়ার বাড়িতে দেখা গেছে, বাড়ির ভিটায় দুদু মিয়াসহ তিন ভাই বসবাস করছেন। বাড়ির উঠানের এক পাশে সুপারিগাছের খুঁটি ও পলিথিনের চালের ঝুপড়িতে পরিবার নিয়ে থাকছেন দুদু মিয়া। বাতাস এলেই ঘরের চালের পলিথিন ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

দুদু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভাবের সংসারে কোনো সঞ্চয় করতে পারিনি। শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম। সেখানে নানা কথা শুনতে হতো। এরপর বাবার বাড়িতে ঘর তুলে আছি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। কোনো টাকাপয়সা হাতে নেই। তাই কোনো রকম একটা ঘর তুলে তাতে বসবাস করছি। শুনতেছি, ঘূর্ণিঝড় হবে। ঝড় হলে আমার ঘর উড়ে যাবে। গতকাল (শুক্রবার) সারা রাত এই চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি।’

স্বামী অসুস্থ থাকার কারণে কাজ করতে পারেন না দুদু মিয়ার স্ত্রী রেজবি বেগম। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে বাবার বাড়িতে গেছিলাম। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর আয়রোজগার করতে পারছেন না। বাবার সংসারে থাকা–খাওয়া নিয়ে নানা কটু কথা শুনতে হয়েছে। তাই স্বামীর বাড়িতে চলে এসেছি। আমার ছোট দুটি ছেলে–মেয়ে বৃষ্টি হলে ঘর ভেঙে যাওয়ার ভয়ে থাকে। টাকার অভাবে ঘর করতে পারছি না।’

এই দম্পতির মেয়ে ঊর্মি আক্তার বলে, ‘টেলিভিশনের খবরে দেখেছি, যাদের ঘর নেই প্রধানমন্ত্রী তাদের পাকা ঘর করে দিচ্ছে। আমাদের একটি পাকা ঘর দিলে ভালো হতো।’

মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈকত রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জমি আছে ঘর নেই—এমন পরিবারগুলোর সরকারের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার প্রকল্প আপাতত বন্ধ রয়েছে। দুদু মিয়া মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রশাসনের কাছে ঘরের জন্য আবেদন করলে আমরা পরবর্তীতে তাঁকে পাকা ঘর দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেব। এছাড়া তাঁকে অন্য কোনো উপায়ে ঘর তৈরি করে দেওয়া যায় কি না তা ভেবে দেখব।’