আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদককে ‘দাওয়াত না দেওয়ায়’ ফরিদপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সফর স্থগিত

ফরিদপুর সদর উপজেলার ভাঙ্গীডাঙ্গী গ্রামে অবস্থিত ১০ শয্যা বিশিষ্ট মাজেদা বেগম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করার কথা ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আজ শনিবারের পূর্বনির্ধারিত সফর স্থগিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৈরী আবহাওয়ার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, মন্ত্রীর কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দাওয়াত না করায় সফর স্থগিত করা হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এ কর্মসূচিতে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

মন্ত্রীর সফরের ২১ ঘণ্টা আগে গতকাল শুক্রবার দুপুরে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. রেয়াজুল হকের ৬ জুন স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে জানা যায়, আজ শনিবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মোতালেব হোসেন হাইস্কুল মাঠে নামার কথা। সাড়ে ১০টায় ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ভাঙ্গীডাঙ্গী গ্রামে অবস্থিত ১০ শয্যা বিশিষ্ট মাজেদা বেগম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন। এরপর ১১টা ৩০ মিনিটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুর এলাকায় যাবেন। সেখানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টা সদস্য এ কে আজাদের বাড়ির আঙিনায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা বেশ কিছু দিন ধরে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক অংশের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক। অপর অংশের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ।

মাজেদা বেগম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। তবে ওই কেন্দ্রের জন্য ৫০ শতাংশ জমি দান করেন এ কে আজাদ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
ফাইল ছবি

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি স্থগিত হওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়নি জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে। ফোনের মাধ্যমে প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ও পরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ফোন করে বিষয়টি জানান ফরিদপুর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজাম্মেল হককে।
মোজাম্মেল হক শনিবার দুপুরে বলেন, মন্ত্রীর সফর কেন স্থগিত হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ে সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী ‘অনিবার্য কারণের’ কথা বলেছেন। আর জেলা প্রশাসক ‘বৈরী আবহাওয়া’ বিষয়টি বলেছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ‘অনিবার্য কারণের’ কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়া ও হেলিকপ্টারের নামার সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ সফল স্থগিত করা হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী আশরাফ বলেন, হাসপাতাল উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াককে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। মন্ত্রীর সফরসূচিতে ‘সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য’ যাঁদের সফরসূচির চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৩১ নম্বরে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান।

সৈয়দ আলী আশরাফ আরও বলেন, তাঁরা বিষয়টি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের জানাননি। ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারাই মন্ত্রীর সফরসূচি দেখার পর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের বিষয়টি জানান। এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে এ কর্মসূচি স্থগিত হয়ে যায়।