কয়রায় আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবি, নেতৃত্বে আপন ভাই

গত ২৯ জুন জামায়াত নেতা আবুল কালাম আজাদের পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন খুলনার কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদছবি: সংগৃহীত

খুলনার কয়রা উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর এক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের নেতা ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদের অপসারণের দাবি তুলেছে বিএনপি।

গতকাল রোববার বিকেলে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে কয়রা উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

স্থানীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত ২৯ জুন। সেদিন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের জামায়াতের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। ওই সভায় চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। বক্তব্যের ছবি ও ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে, শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

ভিডিওতে চেয়ারম্যানকে বলতে শোনা যায়, বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ছিল, রাজনৈতিক ভাষায় সেটি ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল। তাদের পতনে জামায়াতের সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল। ...অনেক রাজনৈতিক দল বলে, প্রস্রাব করে দিলে ভেসে যাবে, তবে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ভালো নয়। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের লন্ডন সফর ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক নিয়েও মন্তব্য করেন।

বিক্ষোভের মঞ্চে নেতৃত্বে থাকাদের একজন আওয়ামী লীগের নেতা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদের আপন ভাই মনিরুজ্জামান। তিনি খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য ও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান
ছবি: সংগৃহীত

গতকালের বিক্ষোভ সমাবেশে স্থানীয় বিএনপির নেতাদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদ সমাবেশ’। তবে মাইকে বক্তব্যে ভেসে আসে জামায়াত-আওয়ামী লীগ আঁতাতের অভিযোগ।

ওই বিক্ষোভের মঞ্চে নেতৃত্বে থাকাদের একজন চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদের ভাই মনিরুজ্জামান। তিনি খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘দলের আদর্শই আমাদের কাছে সবার ওপরে। আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতে পালিয়েছে, তাদের লেজ এখনো এখানে রয়ে গেছে। ওই লেজই হচ্ছে এই ইউপি চেয়ারম্যানরা। তারা জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’ তিনি প্রশাসনের কাছে তাঁর ভাই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

খুলনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম সমাবেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জামায়াত-আওয়ামী লীগ গোপনে আঁতাত করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে রাজনৈতিক সভা করে তারা সেটা প্রমাণও করেছে। সরকারপ্রধান অধ্যাপক ইউনূস আর তারেক রহমানকে নিয়ে কটাক্ষ রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। চেয়ারম্যানের অপসারণ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে।

সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসান। আরও বক্তব্য দেন কয়রা উপজেলা বিএনপি, যুবদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা।

অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেদিন চাল বিতরণ চলছিল। জামায়াতের প্রার্থী আবুল কালাম সাহেব এসেছিলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। আমি অতিথিকে সম্মান দেখাতে দু-একটি কথা বলেছি মাত্র, কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দিইনি। বিএনপি বা তারেক রহমানের নামও উচ্চারণ করিনি।’

জানতে চাইলে জামায়াত নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ এখনো কার্যকর। চেয়ারম্যানও দায়িত্বে আছেন। আমি শুধু তৃণমূলের মানুষের কথা শুনতে সেখানে গিয়েছিলাম। চেয়ারম্যান পাশে ছিলেন। এটি কোনো রাজনৈতিক সভা ছিল না। শুধু স্থানীয় মানুষের মতামত শোনাই ছিল উদ্দেশ্য।’