সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় টিলাধস: একাধিক সংগঠনের বিবৃতি

সিলেট নগরের চামেলীবাগ এলাকায় টিলাধসের স্থান পরিদর্শনে যান সংসদ সদস্য এ কে আব্দুল মোমেন ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় সিলেটে টিলাধস হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে বিভিন্ন সংগঠন। আজ মঙ্গলবার বিএনপিসহ একাধিক সংগঠন বিবৃতি দিয়ে এমন অভিযোগ করে।

জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে দাবি করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে টানা বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও টিলার পাদদেশে বসবাসকারী ব্যক্তিদের সরাতে স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগই ছিল না। সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের ছত্রচ্ছায়ায় সিলেটে অবাধে পাহাড় ও টিলা কাটা হচ্ছে বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক আবু জাফর ও সদস্যসচিব প্রণবজ্যোতি পাল গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে টিলাধসে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনসহ ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এবারের বৃষ্টি মৌসুম শুরু হলে পাহাড় কিংবা টিলায় বসবাসরত ব্যক্তিদের নিরাপদ স্থানে সরানো কিংবা সচেতন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই চামেলীবাগে টিলাধসে হতাহতের দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরই।

বাসদ বিবৃতিতে আরও বলেছে, পাহাড়-টিলা নির্বিচার কাটার ফলে ধসের ঘটনা ঘটছে। মূলত শাসকশ্রেণির দলের লোকেরা এসব পাহাড়-টিলাসহ প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের জন্য দায়ী। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

টিলা কেটে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমাদের সচেতন হতে হবে।
এ কে আবদুল মোমেন, সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এদিকে আজ দুপুর ১২টায় নগরের চামেলীবাগে টিলাধসের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘টিলা কেটে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমাদের সচেতন হতে হবে।’ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘টিলাধসের পরবর্তী পদক্ষেপে সিটি করপোরেশন জিরো টলারেন্সে আছে। জেলা প্রশাসন, কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পরে টিলাধসের ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। এ সময় সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুজাত আলী রফিক, সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরীন আক্তার, সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৮ মে থেকে সিলেটে টানা ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস না করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতামূলক প্রচারণা চালিয়েছে, যা এখনো অব্যাহত। এ ছাড়া কেউ যেন টিলা কাটতে না পারেন, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারিও আছে।