সিলেটে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবিতে গণপদযাত্রা

সিলেট নগরের ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। আজ রোববার দুপুরে জিন্দাবাজার এলাকায়ছবি : প্রথম আলো

সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে গণপদযাত্রা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের অংশগ্রহণে সিলেট নগরবাসীর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় নগরবাসীর নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ চলাচলের স্বার্থে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও টমটম বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ার দাবি জানানো হয়।

দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরের কোর্ট পয়েন্ট থেকে ‘মহানগরবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল’ শীর্ষক এ গণপদযাত্রা শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। পদযাত্রাটি নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে এক সমাবেশে মিলিত হয়। বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত কর্মসূচি চলে।

সমাবেশে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মুহা. হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি, সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান (রিপন) ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাদী (পাভেল), সিলেট উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি লুবানা ইয়াছমিন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিলেট জেলা শাখার সাংগঠনিক সচিব নিয়াজ মো. আজিজুল করিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, গতকাল শনিবার পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সিলেটের সর্বস্তরের জনগণ হকার ও ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদের পক্ষে একমত হয়েছেন। ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে। হকারদের কারণে ফুটপাতে চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। নগরবাসীর স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করার দাবিতে নগরবাসীর পক্ষ থেকে এ গণপদযাত্রার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে আন্তরিক এবং সিলেটের বিভিন্ন মহল, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের মতামত নিয়েছেন। আমরা চাই, হকার ও অবৈধ যানবাহনের সব সিন্ডিকেট ভাঙতে। সকালে তাড়িয়ে দিলে বিকেলে আবার চলে আসেন হকাররা, এটা আর হতে দেওয়া হবে না। লালদিঘীরপাড়ের রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে, শিগগির হকারদের সেখানে স্থানান্তর করবে সিটি করপোরেশন।’

ব্যাটারিচালিত রিকশার বৈধতা চেয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার যাঁরা সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর করেছেন এবং যাঁরা এতে সহায়তা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে আরিফুল হক চৌধুরী বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি থেকে প্রশাসনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। নগরবাসীর শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। হকার ও ব্যাটারিচালিত রিকশা—এ দুটি নগরজীবনের বড় প্রতিবন্ধক।’

কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনসহ নানা শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অনেকের হাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের আহ্বান–সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।

এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর পুলিশের উদ্যোগে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। এতে কয়েক শ অবৈধ যানবাহন আটকের পাশাপাশি মামলা করা হয়। অভিযানের অংশ হিসেবে বুধবার নগরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার চার্জিং পয়েন্টেও অভিযান চালিয়ে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
অভিযানের প্রতিবাদে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ব্যাটারিচালিত রিকশার বৈধতা চেয়ে নগরে বিক্ষোভ করেন কয়েক শ চালক। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাটারিচালিত যানের চালকেরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় তাঁদের যান চলাচলে বৈধতার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।

গণপদযাত্রা শেষে সমাবেশ বক্তব্য দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী
ছবি : প্রথম আলো

ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫
এদিকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ব্যাটারিচালিত রিকশার বৈধতা চেয়ে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় পুলিশ আজ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তার হলেন ১৪ জন। তাঁদের মধ্যে গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া বাসদ সিলেটের আহ্বায়ক আবু জাফর ও সদস্যসচিব প্রণব জ্যোতি পাল রয়েছেন। তাঁদের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন পরিচালিত হয়ে আসছে।
যোগাযোগ করলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আজ বেলা সোয়া তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার বৈধতা চেয়ে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনায় নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আজ আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১৪ জন গ্রেপ্তার হলেন।

বাসদ নেতাদের মুক্তি দাবি
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া আবু জাফর ও প্রণব জ্যোতি পালের মুক্তি চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সিলেটের বামপন্থী কয়েকটি রাজনৈতিক দল। গতকাল রাতে নগরে এ কর্মসূচি হয়। নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট সিলেটের সমন্বয়ক সঞ্জয় কান্ত দাস। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মাশরুখ জলিলের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবি সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য সুশান্ত সিনহা সুমন, বাসদ সিলেটের সদস্য নাজিকুল ইসলাম রানা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেটের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি সুমিত কান্তি দাশ পিনাক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেট নগর শাখার সভাপতি তানজিনা বেগম।